রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর চার দিনও পূর্ণ হয়নি এখনো। তার মধ্যেই এক ম্যাচেই একজনকে খেলোয়াড়কে ফাউলের ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙে গেছে। রেফারির নানা সিদ্ধান্তে উত্তাল ফুটবল বিশ্ব।
ফিফার চালু করা নতুন প্রযুক্তি ‘ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিদের’ (ভার) ক্ষমতা ও ব্যবহার নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। রবিবার (১৭ জুন) রাতে ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড ম্যাচের একটি বিতর্কিত গোল ও নেইমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-কে জার্সি ধরে টেনে ফেলার পরেও রেফারিরা ঘটনাকে গুরুত্ব না দেয়ায় তা আরও সামনে এসেছে।
অথচ রেফারি ব্রাজিলের বিরুদ্ধে সমতায় ফেরার জন্য স্টিভেন জুবেরের করা গোলটা বাতিল করেননি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সুইজারল্যান্ডের হয়ে গোল করার সময় জুবের কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন ব্রাজিলের স্টপার মিরান্দা ফিলহোকে। মেক্সিকান রেফারি সেসার র্যামোসের কাছে প্রতিবাদও করেছিলেন কুটিনহোরা। কিন্তু তিনি গুরুত্ব দেননি। এ বারের বিশ্বকাপে চালু হওয়া ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার) মাথা ঘামাননি। অথচ তারা নিজে থেকেই হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলেও টিভি মনিটররের সামনে বসে নানা কোণ থেকে দেখা ভারের তিন অতিরিক্ত রেফারির কাজই তো সেটা করা।
নেইমারকে প্রথমার্ধে নিজেদের বক্সে জার্সি টেনে ফেলে দেয় সুইজারল্যান্ডের এক ডিফেন্ডার। সেখানেও পেনাল্টির দাবি উঠেছিল। রেফারি গুরুত্ব দেননি। ‘ভার’ও চুপ। ফিফা রেফারি হিসেবে প্রায় এগারো বছর ১০৮ টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন রেফারি সাগর সেন। ১৪টা ডার্বিতে ছিলেন।
আনন্দ বাজারের প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘আজ যে সব আধুনিক প্রযুক্তি রেফারিদের সাহায্য করছে তার কোনও সাহায্য তখন পাইনি। এমনকি, সহকারীর সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থাও ছিল না। এখন তো রেফারির কানে সারাক্ষণ রিলে করতে পারেন মরিটরের সামনে বসে থাকা সহকারীরা। সঙ্গে ফিফা চালু করেছে অত্যাধুনিক ‘ভার’।’
তিনি জানান, ফিফার এই প্রচেষ্টা ভাল, কিন্তু প্রয়োগে বা নিয়মে অনেক ফাঁক থেকে যাচ্ছে। যেমন ১৯৮৬ তে আর্জেন্টিনা হয়তো চ্যাম্পিয়নই হতে পারত না ‘ভার’ নিয়ম চালু থাকলে। ম্যারাডোনার করা সেই বিখ্যাত ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলটা ধরা পড়ে যেত। তবে সে ক্ষেত্রে রেফারি বা ‘ভার’-এর সদস্যদের উদ্যোগ নিতে হত।
বর্তমান নিয়মে ‘ভার’ এর সিদ্ধান্ত রেফারি মানতেও পারেন, না মানতে পারেন। সকল ক্ষমতা মাঠের রেফারির হাতে। বড় ব্যাপার হল মাঠে যে খেলোয়াড়দের দাবি রেফারি কিভাবে বিবেচন করছেন। কিক্রেট-টেনিসে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়রা পাল্টা আবেদন জানিয়ে ভিডিও আম্পায়ারের সাহায্য চাইতে পারে।
তখন ভিডিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, কারণ সেখানে কোনো অনিশ্চয়তার ব্যাপার নেই। সাগর সেন মনে করেন, ফুটবলেও খেলোয়াড়দের এই সুবিধা দেয়া উচিত। প্রযুক্তি এই যুগে একজন রেফারির হাতে সব ক্ষমতা দেয়া যায় না। কারণ মানুষ হিসেবে একজন রেফারির ভুল হতেই পারে।
দ্রুত গতির খেলা ফুটবলে, সেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় রেফারিদের, তাই নির্ভুর ম্যাচ পরিচালনা একজন রেফারির দ্বারা সম্ভব না। প্রয়োজন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার ‘ভারদের’ হতে ছেড়ে দেয়া।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন