যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক এক সপ্তাহ পর চীন সফরে গেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। গত চার মাসের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বেইজিং গেলেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়া কিভাবে দর-কষাকষি করবে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতেই উন এ সফর করছেন।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভির খবর অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার সকালে বেইজিং পৌঁছনোর কথা উনের। দুই দিনের সফরে তিনি চীনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
গত মার্চ থেকে উন এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো চীন সফর করলেন। এর মধ্যে মার্চের সফর ছিল নেতা হওয়ার পর উনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, উনের সফর বেইজিং ও পিয়ংইয়ংয়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করবে।
জাপানের দৈনিক ‘নিক্কেই’ পত্রিকা জানায়, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সব কিছুই উন চীনের প্রেসিডেন্টের সামনে তুলে ধরবেন। এ ছাড়া উন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের যে প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পকে দিয়েছেন, তার বিনিময়ে কিভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা মিলতে পারে সে ব্যাপারে চীনের পরামর্শ চাইবে উত্তর কোরিয়া। অবশ্য ট্রাম্প-উনের বৈঠকের পর বেইজিং জানিয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, গতকাল বেইজিংয়ে চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন উন। এ সময় চীন-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন দুই নেতা। এছাড়া কোরীয় উপদ্বীপে যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সূচনা হয়েছে সেটাকেও এগিয়ে নিতে চান তারা। এর মধ্য দিয়ে তারা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, অগ্রগতি ও উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চান।
ট্রাম্প-উনের বৈঠকের টেবিলে অবশ্য চীনের কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওই বৈঠকে প্রচ্ছন্নভাবে চীনের বেশ আধিপত্য ছিল। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে চীনই উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় মিত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের মূল দাবি হলো, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে পুরোপুরি সরে আসতে হবে। অন্যদিকে উন নিজে ক্ষমতায় থাকার নিশ্চয়তা এবং উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চান। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর উন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ‘পরমাণু অস্ত্রমুক্ত কোরীয় উপদ্বীপ’ চান। যদিও ‘পরমাণু অস্ত্রমুক্ত কোরীয় উপদ্বীপ’ শব্দ চারটির কারণে উনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সমালোচকদের সন্দেহ আছে।
উনের চীন সফর নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুয়া পো বলেন, উত্তর কোরিয়া কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মোকাবেলা করবে সে বিষয়ে আলোচনা করা উন ও চিনপিংয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত উত্তর কোরিয়া দেখতে চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবি মেনে নেওয়া উনের জন্য কঠিন একটা ব্যাপার। এ অবস্থায় কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে একটা কৌশল নির্ধারণে বেইজিং ও পিয়ংইয়ং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে চাইছে।
এদিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার সামরিক মহড়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘোষণার পেছনে বেইজিংয়ের প্রভাব রয়েছে। কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরেই এ মহড়া বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।
সূত্র : এএফপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন