চট্টগ্রামে বাবার সামনেই ছেলে আবু জাফর মো. অনিককে (২৫) খুন করে স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাং। এ ঘটনায় অনিকের বাবা বাদী হয়ে নগরের চকবাজার থানায় যুবলীগ কর্মী মহিউদ্দীন তুষারকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এর পর গত হয়েছে তিনটি দিন। তবে পুলিশ এই পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেফতার করতে পারেননি।
অনিকের বাবার অভিযোগ, রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে পুলিশ। চাইলে মোবাইল ট্র্যাকিং বা প্রযুক্তির ব্যবহারে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সব আসামিকে গ্রেফতার করতে পারে।
আর বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কেন্দ্রীয় বিশেষ প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আমিনুল হক বাবু বলেন, পুলিশ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের নজির আমাদের কাছে আছে। একটু আন্তুরিক হলে সবই সম্ভব। আর এই মামলায় আসামি অজানা নয়! সুনির্দিষ্ট। আসামিদের গ্রেফতারে গড়িমসি কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মত নয়।
তবে অনিকের বাবা ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কেন্দ্রীয় বিশেষ প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আমিনুল হক বাবুর এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) নোবেল চাকমা বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মামলা যখন হয়েছে আসামি গ্রেফতার হবেই। পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
নিহত অনিকের বাবা মো. নাছির উদ্দিন আরো বলেন, গত ১৭ জুন রোববার রাত নয়টার দিকে অনিককে নিয়ে আমি বাসায় ফিরছিলাম। এ সময় নগরীর চকবাজার থানার চট্টেশ্বরীর ২নং পল্টন রোড এলাকায় সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের বাড়ির বিপরীত রাস্তার উপর আমার সামনেই অনিককে উপর্যুপরি ছরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। সাথে সাথে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতেই পথে আমার কোলে প্রাণ হারান অনিক।
এ ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার মহিউদ্দীন তুষারসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে সিএমপি চকবাজার থানায় একটা হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- যুবলীগ ক্যাডার মিন্টু (৩২), ইমরান শাওন (২৬), কিশোর গ্যাংয়ের ইমন (১৬), শোভন (২৪), রকি (২২), অপরাজিত (২২), অভি (২১), বাচা (২২), এখলাস (২২), দুর্জয় (২১) ও অজয় (২১)।
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম জানান, ঘটনার পর পরই আসামিদের অবস্থান সনাক্ত করা জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালানো হয়েছে। তারা সবাই বাসায় তালা লাগিয়ে পালিয়েছে। আশা করি শীঘ্রই আসামিরা গ্রেফতার হবে।
অনিকের মা আক্তার বেগম জানান, ছেলে ভালোবেসে রিমা আক্তার অরিনকে (২১) বিয়ে করেছে ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট। দুই পরিবার জানার পর এক হয়েছি আনুষ্ঠানিকভাবে ছেলে বউকে ঘরে তুলে আনবো। তবে তার আগেই আমার ছেলেকে খুন করলো পাষণ্ডরা।
অনিকের বাবা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ছেলে অনিক যদিও নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে, আমরা জানার পর তাতে কেউ অমত পোষণ করেনি। ওর চাচা জাপান থেকে দেশে ফেরার পর এক মাসের মধ্যেই প্রথমে চাচাকে বিয়ে করানো হবে। এর পর পরই অনিকের বউকে ঘরে তুলে নেব এমন সিদ্ধান্ত ছিল। খুনিরা সকল স্বপ্ন নতসাৎ করে দিয়েছে।
অনিকের স্ত্রী রিমা আক্তার অরিন বলেন, আমি আমার শ্বশুর শাশুড়িকে সালাম করতে এসে শুনি অনিক নেই। আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন