রাশিয়া বিশ্বকাপে পেরুকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ফ্রান্স। টানা দুই জয়ে নকআউট পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে তারা। পিএসজির ফরাসি স্টাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পের ৩৪ মিনিটের গোলে পেরুর বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় ফ্রান্স।
ম্যাচের ৩৪ মিনিটে দারুণ এক গোল করে দলকে লিড এনে দিয়েছেন পিএসজির এই ফরাসি স্টাইকার। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় একাতেরিনবার্গে শুরু হয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ 'সি' এ বৃহস্পতিবারের দ্বিতীয় ম্যাচটি। প্রথম ম্যাচে হেরে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামা পেরু তাদের প্রতিপক্ষ। আর সেই খেলায় ৩৪ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপের গোলে ১-০ তে এগিয়ে গেছে ফ্রান্স। জিতলেই তারা এক ম্যাচ হাতে রেখে চলে যাবে নক আউট পর্বে। আর পেরু হারলে বিদায় নেবে। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয়েছে ওই এক গোলেই।
খেলার প্রথম মিনিট ১৫ এর মধ্যেই ফ্রান্স দ্রুত গোল পাওয়ার আকাঙ্খাটা বুঝিয়ে দেয়। অলিভিয়ের গিরুদ বুকে বল টেনে সেটিকে এমবাপের কাছে দিলেও আঁতোয়া গ্রিজমানকে তা বুঝিয়ে দেওয়ার আগে হারান। এরপর গিরুদকে বল দিয়ে রিটার্ন পাস নিয়ে আঁতোয়া গ্রিজমান শট নিলেও তা লক্ষ্যহীন হলো। পল পগবাও ২৫ গজ দুর থেকে যে চেষ্টাটা করেছিলেন তা গোলকিপারের বেশ দুর থেকেই চলে গেল। গিরুদের হেডে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন গ্রিজমান। কিন্তু জোর ছিল না। গোলকিপার গালেসেও প্রস্তুত ছিলেন বলে সহজে ধরেছেন।
পেরু সৃষ্টিশীল ও গতিময় ফুটবল খেলে। কিন্তু তাদের আগেই চ্যালেঞ্জ করে বসা ফরাসিদের সামনে ছন্দ খুঁজে পেতে সময় লাগছিল। ১৯ মিনিটে একটি ফ্রি-কিক পেরু পেল বটে। কিন্তু উয়োতুন গোলমুখে চমৎকার বল পাঠালেও উমিতিকে ফাউল করে বসেন রদ্রিগেজ। কিন্তু তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক আক্রমণটি ছিল ৩২ মিনিটে। ফ্লোরেস কাটিয়ে নেন পাভার্দকে। এরপর নিচু ক্রস করেন। কুয়েভা সেই বলে উমিতিকে এড়িয়ে গোলের প্রায় ১২ গজ দুর থেকে শট নেন। বাঁ পায়ের সেই জোরালো শট গোলকিপার লরিস পা দিয়েই ঠেকিয়ে রক্ষা করেছেন দলকে।
পেরুর এমন আক্রমণ পছন্দ হয়নি বুঝি ফরাসিদের! ৩৪ মিনিটে লিড নেয় তারা। মাঝমাঠে বল হারায় পেরুভিয়ানরা। গিরুদ-পগবা মিলে এগিয়ে যান পেরুর রক্ষণের দিকে। গোল বক্সে ঢুকে পড়ে বাঁ দিক দিয়ে গিরুদ চমৎকারভাবে বলটাকে তুলে দিলেন। এমবাপে ছিলেন সেখানে। গোলরক্ষক পজিশন হারিয়েছেন। গোলমুখের ঠিক ডানে পায়ের হালকা ছোঁয়ায় বলটাকে জালে জড়িয়ে ফরাসিদের উৎসবে মাতান এমবাপে। পারফেক্ট গোল বলা যায়।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আঁতোয়া গ্রিজম্যান ও পল পগবার গোলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় পায় ফ্রান্স। গ্রিজমান-পগবা-এমবাপে-গিরুদদের ফ্রান্স তারকানির্ভর। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে যেভাবে তারা ফেভারিট হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছিল তেমন খেলা প্রথম ম্যাচে উপহার দিতে পারেনি। হল্যান্ড, ইতালি, রাশিয়াকে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে হারিয়েছিল দাপটে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দারুণ ধারাবাহিক ছিল। হেরেছিল মোটে এক ম্যাচে। কিন্তু অনেক পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ইউরোপের দলটিকে শেষ পর্যন্ত ভিএআরের ভাগ্যে জিততে হয়েছিল ২-১ গোলে। রাশিয়ায় অন্যতম ফেভারিট হয়ে যাওয়া দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনও এই দ্বিতীয় ম্যাচটি।
পেরু বিশ্বকাপে এসেছে ৩৬ বছর পর। লাতিন আমেরিকার দলটির সাথে ফ্রান্সের দেখা হয়েছিল একবারই। সেই ১৯৮২ সালে। সেবার ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল পেরুভিয়ানরা। সময় পেরিয়েছে অনেক। কিন্তু ওই জয়কে এখনো প্রেরণা হিসেবে নিতে পারেন পেরুর খেলোয়াড়রা। উপায়ও নেই তাদের হাতে।
ডেনমার্কের বিপক্ষে তারা দারুণ গতির এবং চমৎকার নৈপুণ্যের খেলা উপহার দিয়েছিল। ক্রিস্টিয়ান কুয়েভা পেনাল্টি শটটাকে নষ্ট করেছিলেন বারের উপর দিয়ে বলটাকে পাঠিয়ে। আক্রমণাত্মক খেলার প্রমাণ রাখলেও শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে জরুরি কাজটি সেদিন করতে পারেনি পেরুভিয়ানরা। এই কারণেই এখন বেশি বিপদে তারা। জিততেই হবে। আবার ড্র করলে অংকের মারপ্যাচে একটা সুযোগ থাকবে। অস্ট্রেলিয়া যেভাবে দিনের প্রথম ম্যাচে ডেনমার্কের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে।
ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য দুই দলের মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান বলার উপায় নেই। কারণ ফ্রান্স ওখানে ৭ নম্বরে। আর ১১ নম্বরে পেরু। আজ জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যায় দিদিয়ের দেশমের শিষ্যদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন