ঈদের পর থেকে বেশ আরামেই বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতে পারলেও সপ্তম দিনে এসে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে কর্মস্থলমুখী মানুষের। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেলা বারটার পর থেকে সন্ধা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত যানজট রয়েছে। যানজট মহাসড়কের প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তার ঘটেছে।
মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের পাকুল্যা পর্যন্ত যানজট রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ঈদের ছুটির পরও বাড়তি ছুটি শেষে মানুষ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এতে মহাসড়কে যান চলাচল কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে ঈদের আগে মহাসড়কের চার লেন খুলে দেয়া হলেও বর্তমানে কয়েকটি ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকাগামী যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
শুক্রবার ভোর থেকে গাড়ির চাপ আরও বেড়ে গেলে মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা ১২টার পর থেকে মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় ঢাকাগামী যান চলাচল আটকা পড়লে যানজট শুরু হয়। এক পর্যায়ে যানজট মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর উপজেলার কুরণী এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী হয়।
এছাড়া মির্জাপুরের দেওহাটা থেকে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরাতন সড়কেও প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। দিনভর থেমে থেমে যান চলাচল করলেও সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে গাড়ির চাকা থেমে যায়। সন্ধা সাড়ে সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যানজট মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকায় উভয় পাশে গাড়ির চাকা থেমে রয়েছে।
এদিকে টাঙ্গাইলগামী যানবাহন চলাচল করলেও মহাসড়কের মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকায় সিঙ্গেল রোড এবং রেলগেটে বেরিয়ার নামানোর কারণে যানজটে আটকা পড়তে হচ্ছে। এতে কর্মস্থলমুখী যাত্রী, যানবাহনের স্টাফ ও সাধারণ মানুষকে ওই এলাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের মির্জাপুর বাইপাস, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, কুরনী, ধল্যা, পাকুল্যা, জামুর্কী, দেওহাটা, সোহাগপাড়া ও গোড়াই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাস না পেয়ে অনেক যাত্রীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ, মেক্সি ও মোটরসাইকেলযোগে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
যানজট নিরসনে মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকলেও প্রচণ্ড তাপদাহ ও ধুলার কারণে তারা নিয়মিত কাজ করতে পারছেন না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহাসড়কে কর্তব্যরত পুলিশের কয়েকজন অফিসার।
সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পিকআপের চালক আবুল হোসেন বলেন, সকাল ৯টার দিকে সিরাজগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বেলা ১২টার দিকে মহাসড়কের কুরণী এলাকায় এসে যানজটে আটকা পড়েন। এক ঘণ্টায় তিনি চার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মির্জাপুর বাইপাস পারি দেন।
একই কথা বলেন, টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মালভর্তি ট্রাকের হেলপার সজিব হোসেন ও গোপালপুর রোডের বাসের সুপারভাইজার আলহাজ মিয়া।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাসের যাত্রী রহিজ উদ্দিন, মোছলেম মিয়া জানান, বিকেল চারটায় চন্দ্রা এলাকায় এসে আটকা পড়েন। প্রায় তিন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মির্জাপুর বাইপাস পর্যন্ত আসতে পেরেছেন।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এস আর পরিবহনের সুপারভাইজার আজাহার মিয়া জানান, ঈদের আগে মহাসড়কের সব ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল করলেও ঈদের পরে অনেক ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল করতে পারছে না বলে জানান।
মির্জাপুরের দেওহাটা বাইপাস স্টেশনে কর্তব্যরত টিআই মো. ইফতেখার বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। মহাসড়কের চন্দ্রা এবং ধেরুয়া এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হলেই যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলায় বিভিন্নস্থানে প্রচুর ধুলা উড়ছে। এ কারণে সামনে কিছু দেখা যায় না। ধুলার কারণে যানবাহনের চালকেরা ধীর গতিতে যান চালান। তাছাড়া যান বাহনের চালকেরা ট্রাফিক আইন না মেনে যান চালানোর কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন