১৯৯৮ বিশ্বকাপ। ফাইনালে লড়াই ছিল ফ্রান্স ও ব্রাজিলের। প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারায় ফ্রান্স। প্রথমবার ফাইনালে উঠেই বিশ্বজয়! ফ্রান্সের এই বিশ্বজয়ের গল্পই এখন তাদের চিন্তার বিষয়। কারণ দৃশ্যপট বদলে এবার প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের বিশ্বজয়ের গল্পই তাদের প্রেরণা। ক্রোয়েশিয়ার কাছে আর রূপকথা নয়, সত্যি হতে পারে বিশ্বকাপ হাতে ঘরে ফেরার স্মৃতি। মাথার মুকুট- বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নিতে এবার ৩২ দল বিমান ধরেছিল রাশিয়ার। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলতে লড়াইয়ে একে একে কাটা পড়েছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ড। হট ফেবারিট, বড় তারকায় ঠাসা দলগুলোকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল ভক্তদের। সবার যখন বিদায়ঘণ্টা বাজছে তখন বিশ্বজয়ের বাঁশির সুর শুনতে পাচ্ছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। তারকাপতনের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় তারকা এখন দুজন। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম আর ক্রোয়েশিয়া। চমকে গেলে চলবে না। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স দলের দলনেতা ছিলেন এই দেশম। এবার হাজির হয়েছেন কোচ হয়ে। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপে চুমু খেয়েছেন একবার। এবার কোচ হয়ে চুমু খাওয়ার সাধ পূরণ হওয়ার পালা। ফাইনালে ওঠার আগে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে আর বেলজিয়ামের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে এসেছে ফ্রান্স। শেষ তিন খেলাতেই দিদিয়ের দেশম দেখিয়েছেন খেলা নিয়ে মাঠের বাইরেও মাথা ঘামাতে হয়। মাঠে ফ্রান্সের গ্রিজম্যান, এমবাপ্পে, পগবা, উমতিতি এদের সাজাচ্ছেন তিনি। কখন কে ছোবল বসাবে সে হিসাব কষতে পারেনি প্রতিপক্ষ। তাই দলে এক তারকার দিকে না তাকিয়ে কোচের দিকে তাকানোই বুদ্ধিমানের। নাটের গুরু তো তিনিই! বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্রান্স ভক্তরা ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব শুরু করে দিয়েছে। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফেবারিট এখন ফ্রান্স। তাদের ধারণা, বেলজিয়াম বাধা টপকানোই বুঝি বিশ্বজয়। কিন্তু এই ঠুনকো হিসাব এই বিশ্বকাপে আর চলবে না, তার প্রমাণ পেয়েছেন স্পেন, জার্মানি আর ব্রাজিল। ফেবারিটের থোরাই কেয়ার করছে রাশিয়ায়। এই পাত্তা না দেওয়া দলগুলোর নেতা ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের সঙ্গে হেরে গিয়েছিল চমক দেখানো ক্রোয়েশিয়া। তৃতীয় স্থান নিয়ে ঘরে ফিরেছিল সেবার। তা এখন অতীত। ক্রোয়েশিয়ার তরুণ এই দলটিকে নিয়ে বাজি ধরার সময় এসে গেছে। নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সব মসলা নিয়ে এসেছে দলটি। বিশ্লেষকদের কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়া ক্রোয়েশিয়ার গোটা দলটিই দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ ফুটবল খেলেছে। পরিশ্রমী বলেই শেষ তিন খেলায় ঘড়ির কাঁটা ১২০ মিনিট ছুঁলেও জয় নিয়ে হোটেলে ফিরেছে তারা। এখন বিশ্বকাপ নিয়ে মাতৃভূমিতে পৌঁছতে চায় ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়েট ভক্তদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছেন অধিনায়ক লুকা মদরিচ। সঙ্গে পেয়েছেন দারুণ সব সতীর্থকে। ক্রামারিচ, রাকিতিচ যেভাবে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছেন তাতে ফ্রান্সের কোচের ভাবনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। রূপকথাকে বাস্তবে নামাতে চাইলে এখন তুলতে হবে আসল কাঁটা। কাঁটার নাম, ফ্রান্স। এ কাঁটা তুললেই ক্রোয়েশিয়ার হাতে উঠবে সোনার বিশ্বকাপ। রাশিয়াতেই এবার নতুন ইতিহাস লেখার হাতছানি ক্রোয়েশিয়ার সামনে। পারবে কি তারা?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন