অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সদ্য নির্বাচিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আগামী সপ্তাহে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করতে পারেন। গ্রেফতার এড়াতে বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মেয়র সাক্কুর একান্তকর্মী জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউছুফ মোল্লা টিপু পরিবর্তন ডট কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আগামী সপ্তাহের রোব কিংবা সোমবার মেয়র সাহেব আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করতে পারেন।
যদিও এই মামলায় গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে মেয়র সাক্কুর জামিন আবেদন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে মেয়র আদালতে হাজির হননি।
সাক্কুর মামলার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের সেতুমন্ত্রী ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে যদি দুদক মামলা করে এটা তাদের আর আদালতের ব্যাপার। এতে সরকার ও আওয়ামী লীগের কোন ভূমিকা নেই।
বৃহস্পতিবার ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড়ে একটি ফুটওভার ব্রিজ উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, ২০০৮ সালের মামলায় সাক্কুর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা কেন করেছে এর জবাব দিতে পারে আইন মন্ত্রণালয়, আদালত এবং যারা মামলা করেছে তারা (দুদক)।
এদিকে বুধবার মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছেছে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায়। গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট কপি) থানায় পৌঁছার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাক্কুর কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদিঘী পাড়ের বাড়ি নজরদারিতে রেখেছে।
এ ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু ছালাম মিয়া পরিবর্তন ডট কমকে বলেন, বুধবার মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার একটি কপি আমাদের কাছে পৌঁছেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি আমাদের কাছে থাকলেও আদালত যে প্রক্রিয়ায় নির্দেশ দিবেন, আমরা সেই নিয়ম অনুসরণ করবো।
তিনি বলেন, তবে আদালত থেকে যে সব প্রক্রিয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে সেভাবে এখনো আসেনি।
দুদকের করা এই মামলায় মঙ্গলবার মেয়র সাক্কু বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সম্পদ জব্দের আদেশ দেন ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত। এর পর থেকে মেয়রের ওই চার তলা বাসায় কেউ নেই বললেই চলে। তবে মেয়রের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকুর পরিবার রয়েছেন ওই বাসায়।
রিংকুর ছেলে আরফানুল হক অরবিন জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘুরাঘুরি করছেন। গাড়ি পার্কিং করেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সাক্কুর ভাই এডভোকেট কাইমুল হক রিংকু বলেন, ২০১২ সালের দিকে উচ্চ আদালত তার বড় ভাই মনিরুল হক সাক্কু ও তার স্ত্রীকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন আদেশ দিয়েছেন। সেই জামিন আদেশের কপি আদালতে জমা দেওয়া আছে। ‘বেইলবন্ড’ও জমা দেওয়া আছে। মামলার নথিতে আদেশের পাতায় তা উল্লেখও আছে। এতো কিছুর পর সেখানে কেন এই ভুল হলো তা বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, ভাই (সাক্কু) যে কোন ওইসব কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করে জামিন চাইবেন।
উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মনিরুল হক সাক্কু’র বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকার রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুমিল্লার সহকারী পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০০৪ সালের ২৬ (২) ও ২৭ (১) আইনে এবং দণ্ড বিধির ১০৯ জরুরি বিধিমালার ২০০৭ এর ১৫ (ঘ) ৫ ধারায় মামলাটি করেছিলেন।
এই মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মঙ্গলবার সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সম্পদ জব্দের আদেশ দেন ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন