শরীয়তপুরের নড়িয়ায় মায়ের অনৈতিক কাজে বাধা দেয়ায় নির্যাতনের পর ১৩ বছরের মেয়ে ঐশীকে দাদি সুফিয়া বেগমের কাছে রাখা হয়েছে। তার ছোট ভাই রাহাতকে রাখা হয়েছে মামা বাড়ি।
শনিবার দুপুরে নড়িয়া উপজেলার ঘোষপাড়া ঐশীর দাদা বাড়িতে সাংবাদিকরা গেলে ঐশী নতুন করে তার মা রুমি আক্তার রুমার ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ঐশীর মা রুমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে ঐশীর মা রুমাকে ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করে শরীয়তপুর সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। রোববার রিমান্ড শুনানির কথা রয়েছে।
ইসরাত জাহান ঐশী বলে, 'আমি যা বলার নড়িয়া থানা পুলিশের কাছে বলে দিয়েছি। আপনার সংবাদ প্রকাশের আমাকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না। যা বলার রোববার আদালতে গিয়ে বলবো।'
ঐশীর দাদি সুফিয়া বেগম বলেন, ঐশীর মায়ের বিষয়ে আমরা কিছুই বলতে পারব না। কারণ আমার ছেলে ও তার স্ত্রী রুমা আমাদের কোনো খোঁজখবর রাখে না এবং টাকা পয়সাও দেয় না।'
আমি থানায় যাওয়ার পর পুলিশ ঐশীকে আমার কাছে রাখার জন্য বলে তিনি জানান।
নড়িয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ঐশীকে তার দাদির কাছে রাখার জন্য বলা হয়েছে।
রোববার রুমার রিমান্ড শুনানি হতে পারে। মামলার ঘটনায় তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় ১৩ বছরের মেয়ে ঐশীকে পায়ে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নির্যাতন করেন মা রুমি আক্তার রুমা। এ ঘটনায় মায়ের বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় ঐশী মামলা করলে বৃহস্পতিবার রুমাকে গ্রেফতারের পর শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ঐশী শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া পৌরসভার ঘোষপাড়া এলাকার ইতালি প্রবাসী সুমন কাজীর মেয়ে। সে বিহারী লাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐশীর বাবা সুমন কাজী ৭-৮ বছর ধরে ইতালি রয়েছেন। তার স্ত্রী রুমি আক্তার রুমা মেয়ে ঐশী ও ছেলে রাহাতকে (৮) নিয়ে পৌরসভার বৈশাখী পাড়ার জুয়েল ছৈয়ালের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। স্বামীর অবর্তমানে ২০১১ সালে নড়িয়া থানার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে রুমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মায়ের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় ঐশীর ওপরে নির্যাতন চালানো হয়। ঐশীকে পুলিশের হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মাঝে-মধ্যেই নির্যাতন করতেন রুমা।
মঙ্গলবার ঐশী বিষয়টি তার বাবাকে জানাবে বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রুমা। একপর্যায়ে পায়ে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে ঐশীকে বটি দিয়ে কোপ দেয়। এতে ঐশীর বাম হাতের কনুই কেটে যায়। তার হাতে ১১টি সেলাই দেয়া হয়েছে।
তাকে মঙ্গলবার হাসপাতালে নিয়ে গোপনে চিকিৎসা করানো হয়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঐশী নড়িয়া থানায় মায়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুমা ফের ঐশীর পায়ে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে নির্যাতন করতে থাকলে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে রুমাকে আটক করে নড়িয়া থানায় নিয়ে যায়।
এর আগে রুমা ঢাকায় থাকাকালে একই কারণে ঐশীকে খুন্তি গরম করে পায়ে ছেঁকা দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন