স্বামীর সংসার ছাড়িয়েছে। অতপর বিয়ের ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চার বছর রক্ষিতা করে রেখেছে। যখনই এর প্রতিবাদ করতে গিয়েছে এবং স্বামীর অধিকার দাবি করেছে তখনই নেমে এসেছে নির্মম নির্যাতন। ভয় দেখিয়েছে পুরো পরিবারকে হত্যা করার। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু প্রতিবারই গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেছে। সর্বশেষ আবারো অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গর্ভের সন্তানটি নষ্ট করতে আবারো চা দেয়া হয়। না করলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। গিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু থানা কোনো সহযোগিতা করেনি। পরে আদালতে গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরপর জীবন নিয়ে টানাটানি। জীবন বাঁচাতে মৌলভীবাজার থেকে ওই তরুণী পালিয়ে ঢাকায় এসেছেন।
এভাবেই গত চার বছর ধরে তার উপর নির্যাতন করে আসছিলেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১০নং দক্ষিণবাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজির উদ্দিন (৫১)।
নির্যাতিতা ওই তরুণীর বয়স আজির উদ্দিনের অর্ধেকেরও কম। একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ওই তরুণী।
ছয় বছর আগে স্থানীয় এক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের পর দুই পরিবারের মধ্যে সামান্য কলহ হয়। যে কলহের মীমাংসার জন্য দুই পরিবারের সদস্যরাই দ্বারস্থ হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আজির উদ্দিনের।
সেখানেই আজির উদ্দিনের চোখ পড়ে ওই তরুণীর উপর। সে থেকেই আজির উদ্দিন নানা কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো ওই তরুণীকে। এক পর্যায়ে তরুণীর স্বামীকে বাধ্য করে তালাক দিতে।
ওই সময় তরুণীর কোলে ১৫ মাসের একটি কন্যা সন্তান ছিলো। যার বর্তমান বয়স প্রায় পাঁচ বছর।
স্বামী তালাক দেয়ার পর তরুণী গিয়ে তার পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করার পরই তরুণীকে জিম্মী করেন আজির উদ্দিন। ভয়ভীতি দেখিয়ে তরুণীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেন আজির উদ্দিন। এক পর্যায়ে আজির উদ্দিন একটি ভুয়া বিয়ের কাগজ তৈরি করে তা তরুণীর হাতে ধরিয়ে দেন।
এর মধ্যে কয়েকবার গর্ভ ধারণ করে ওই তরুণী। কিন্তু প্রতিবারই গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে বাধ্য হন তিনি।
শেষ পর্যন্ত তরুণী বুঝতে পারেন তাকে যে কাগজটি দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। খোঁজ খবর নিয়ে তার প্রমাণ মেলে।
কিন্তু আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি। আজির উদ্দিন হুমকি দিয়েছিলেন এ নিয়ে কথা বললে তার মেয়েসহ পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা হবে।
পুরো পরিবারের ক্ষতির কথা চিন্তা করে আজির উদ্দিনের অত্যাচার দিনের পর দিন সহ্য করে গেছেন ওই তরুণী।
নির্যাতিতা তরুণী জানান, আবারো তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে গর্ভের সন্তানের বয়স ২২ সপ্তাহ। এই সন্তানটিও পেটে আসার পর আজির উদ্দিন তা নষ্ট করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। কিন্তু এবার তিনি সন্তান নষ্ট করেননি। এতে তার উপর অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কৌশলে ১৫ মে তিনি বড়লেখা থানায় যান। কিন্তু পুলিশ আজির উদ্দিনের নাম শুনে মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তিনি এক আইনজীবীর মাধ্য আদালতে যান। আদালতে একটি অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
তরুণী বলেন, আদালতে অভিযোগ দেয়ার কথা শুনে আজির উদ্দিন এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা উন্মাদ হয়ে গেছেন। তারা তাকে হত্যার জন্য খুঁজছেন।
তিনি বলেন, মেয়েটিকে নিয়ে কোনোভাবে পালিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজির উদ্দিন শুধু ওই তরুণীরই নয়, অনেকের জীবন এভাবে নষ্ট করে দিয়েছেন। অনেকের পরিবার শেষ হয়ে গেছে। কাশেম নগরের এক তরুণীকে বছর খানেক আগে তিনি কু প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই তরুণীকে বাড়ির মধ্যে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন। বাড়ির লোকজন বাধা দিলে সে সময় চলে যান চেয়ারম্যান। দেড় মাস আগে চেয়ারম্যান তার বাড়িতে ঢুকে রাতের বেলায় আবারো ওই তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। বাড়ির লোকজন এবারো বাধা দেন। তার স্বামীকে চাপ দেয়া হচ্ছে তিনি যাতে স্ত্রীকে তালাক দেন।
ওই তরুণী আজ বলেন, তার সংসার ভাঙার চেষ্টা করছেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের কথা না শোনায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় ছয়টি মামলা দিয়েছেন। এখন তার পুরো পরিবার দিশেহারা।
এদিকে, ঘটনার ব্যাপারে আজির উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মামলা না নেয়া এবং ওই তরুণীকে নিরাপত্তা না দেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে বড়লেখা থানার ওসির মোবাইলে ফোন দেয়া হয়েছিলো। তিনিও ফোন ধরেননি।
জানা গেছে, আজির উদ্দিন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন