বৈরী আবহাওয়ায় পর্বতে আটকে পড়া বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম ও তার সহআরোহীদের নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও দেশে ফেরা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সোমবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে মুসা ইব্রাহীম নিজেই দেশে ফেরা নিয়ে এ সংশয় প্রকাশ করেছেন। ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি জানান, তাকেসহ তিন পর্বতারোহীকে উদ্ধারকারী তিমিকার হেলিকপ্টার কোম্পানি এশিয়াওয়ান তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে গৃহবন্দি করে রেখেছে।
বাড়তি অর্থের দাবিতে এশিয়াওয়ান এটি করেছে বলেও জানিয়েছেন মুসা ইব্রাহীম।
পরিবর্তন ডটকমের বানান স্টাইলসহ ফেসবুকে মুসা ইব্রাহীমের স্ট্যাটাস নিচে দেওয়া হলো,
আমাদের পাসপোর্ট অবৈধভাবে বাজেয়াপ্ত করে গৃহবন্দি করে রেখেছে তিমিকার হেলিকপ্টার কোম্পানি- এশিয়াওয়ান।
উদ্ধার পেয়েছি বেস ক্যাম্প থেকে কিন্তু উদ্ধার হচ্ছে না হেলি কোম্পানির হাত থেকে। অ্যাডভেঞ্চার কিন্তু এখনো শেষ হয়নি।
যে হেলিকপ্টার কোম্পানি (এশিয়াওয়ান) আমাদের বেস ক্যাম্প থেকে নিয়ে এসেছে, তারা আমাদের পাসপোর্ট অবৈধভাবে বাজেয়াপ্ত করে গৃহবন্দি করে রেখেছে। তাদের দাবি, তাদেরকে তিনবার তিমিকা থেকে বেস ক্যাম্প পর্যন্ত ফ্লাই করার খরচ দিতে হবে ১১ হাজার ইউএস ডলার। কিন্তু গতকাল রোববার তারা নিজেরাই দেরি করে সকাল ১০টায় বেস ক্যাম্পের দিকে গিয়েছিল, ততক্ষণে আবহাওয়া খারাপ হয়ে গিয়ে হেলিকপ্টার ফিরে এসেছে তিমিকায়, যা কি না পুরোটাই হেলিকপ্টার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। কারণ আমরা সকাল ছয়টা থেকে প্রস্তুত ছিলাম।
আজ সোমবার তারা সকালে আমাদের বেস ক্যাম্পের পাশের একটা জায়গা থেকে প্রথমবার গিয়ে ফিরে আসে। আমরা দেখতে পেয়েছিলাম হেলিকপ্টার কিন্তু তারা প্রথমবার উদ্ধার না করেই ফিরে আসে। দ্বিতীয়বার আমরা পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম যেন হেলিকপ্টার দেখামাত্রই তা উড়িয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি এবং তা করেছি।
এখন হেলিকপ্টার কোম্পানির কথা হলো, তাদেরকে পুরো তিনবারের টাকা দিতে হবে। আমরা, সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও নন্দিতা চন্দ্রশেখর (ভারতের এভারেস্টজয়ী দুই পর্বতারোহী) এবং আমি ৮ হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছি এবং সে মোতাবেক ফ্রাঙ্কি কোয়াসের প্রতিষ্ঠান মানাডো অ্যাডভেঞ্চারকে টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া সত্যরূপ শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে সাড়ে চার হাজার ডলার দেয়া হয়েছে। কিন্তু হেলিকপ্টার কোম্পানি এশিয়াওয়ানের জ্যাকবের (+628122312558) দাবি, তাকে পুরো টাকাটা (১১ হাজার ডলার) দিতে হবে। চিন্তা করছি যে, ফিরতে পারবো তো দেশে?
এর আগে চার দিন পর সোমবার ভোর সোয়ার ছয়টার পর মুসা ইব্রাহীম ও তার সহআরোহীদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ওশেনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বত থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
মুসার দুই সহআরোহী হলেন, ভারতের এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও নন্দিতা চন্দ্রশেখর।
মুসা ইব্রাহীমের বোন নূর আয়েশা পরিবর্তন ডটকমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া ভাল থাকায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রোববার উদ্ধার করতে যাওয়া হেলিকপ্টারটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী ফ্রাঙ্কি এদিনও সমন্বয় করেন।’
পরে অবশ্য মুসা ইব্রাহীম নিজেও ফেসবুক স্ট্যাটাসে উদ্ধার হওয়ার খবর জানান। তিনি লেখেন, ‘এই মাত্র টিমিকা এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। আল্লাহর রহমতে আমরা নিরাপদে আছি। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই দেখা হবে।’
বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত চার দিন ধরে মুসা ইব্রাহীমরা পাপুয়া নিউগিনির মাউন্ট কারস্টেনজের বেস ক্যাম্পে আটকা পড়েছিলেন।
গত ১৭ জুন সন্ধ্যা থেকে জানা যায়, মুসা ইব্রাহীম দুই সহআরোহীকে নিয়ে আটকে পড়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় মুসার সহযাত্রী ভারতীয় নাগরিক সত্যরূপ সিদ্ধান্তের স্যাটেলাইট ফোন থেকে পাওয়া বার্তা বলছিল, তারা পরিত্যক্ত কিছু খাবারের সন্ধান পেয়েছেন। সেগুলোই তাদের অমৃতসমান।
এর আগে মুসাদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আজমল কবির গণমাধ্যমকে জানান, মুসা ইব্রাহীম এবং তার সহআরোহীরা আটকা পড়লেও সুস্থ আছেন। স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।
সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাত পর্বতশৃঙ্গ অভিযানের অংশ হিসেবে মুসা ইব্রাহীম অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কারস্টেনজ পিরামিড অভিযানে অংশ নেন।
মুসার এই অভিযানের পৃষ্ঠপোষক নীলসাগর গ্রুপ। ৪ হাজার ৪৮৪ মিটার (১৬ হাজার ২৩ ফুট) উচ্চতার এই পর্বতশৃঙ্গ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘নীলসাগর গ্রুপ মাউন্ট কারস্টেনজ পিরামিড অভিযান’। অভিযানের আয়োজন করেছে এভারেস্ট একাডেমি ও নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ২৫৭ মিটার উচ্চতায় কারস্টেনজের পিরামিডের বেইজ ক্যাম্পে আটকা পড়েন পর্বাতোরোহী মুসা ইব্রাহীম।
গত ২৯ মে ইন্দোনেশিয়ার বালি হয়ে পাপুয়ার নিউগিনির উদ্দেশে যাত্রা করেন মুসা ইব্রাহীম। বালিতে তার সঙ্গে যোগ দেন সত্যরূপ ও নন্দিতা। পরে পাপুয়ার নাবির থেকে শুরু হয় মূল অভিযান।
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাউন্টি এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। এরপর ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আফ্রিকার সর্বোচ্চ মাউন্ট কিলিমানজারো, ২০১৩ সালের ২৬ জুন ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এলব্রুস, ২০১৪ সালের ২৩ জুন উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ডেনালি জয় করেন তিনি।
২০১২ সালের ফেব্রয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট অ্যাকঙ্কাগুয়া অভিযানে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ২১ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন মুসা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন