তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কমপক্ষে ৬০ জন পেশাদার পকেটমার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরী। প্রতিদিন অফিস ছুটির পর নগরীর বিভিন্ন রুটের বাসে উঠে ভিড়ের মধ্যে এরা হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল-মানিব্যাগ।
তিনটি গ্রুপের মূল নেতা হচ্ছে সাহাবুদ্দিন, ফারুক এবং জাহেদুল ইসলাম প্রকাশ লিটন। এদের গডফাদার হিসেবে আছে ঢাকার জামাল ওরফে পিচ্চি জামাল নামে একজন। পিচ্চি জামালের হয়ে চট্টগ্রামে এসব পকেটমার চক্র দেখভাল করে জাহেদ নামে একজন।
নগরীতে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নেয়ার সময় গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ছয়জন হল, মো.বাদশা (২৪), মো.জামাল (৩০), মো.সোহেল (২৭), মো.আলাউদ্দিন (৪২), কালু শেখ (২৬) ও মো.মুন্না (৩২)।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-পশ্চিম) এ এ এম হুমায়ন কবির বাংলানিউজকে বলেন, বাদশা, জামাল ও সোহেল পেশাদার পকেটমার। তিনজন সাহাবুদ্দিন ও ফারুকের গ্রুপে কাজ করে। সাহাবুদ্দিনের ভাগিনা ফারুক। আরেক দলনেতা লিটনকে রোববার খুলশী থানা গ্রেফতার করেছে। তিন গ্রুপে প্রায় ৬০ জন পকেটমার আছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) মইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় পিচ্চি জামাল থাকে। সে মূলত গডফাদার হিসেবে কাজ করে। তার হয়ে চট্টগ্রামের পকেটমারদের দলনেতাদের নিয়ন্ত্রণ করে জাহেদ ওরফে ঘাড় বাঁকা জাহেদ। তার বাড়ি বাকলিয়ার ইছাইক্যারপুলে, তবে ঢাকার বাড্ডায় থাকে।
‘পিচ্চি জামাল কখনও চট্টগ্রামে আসে না। জাহেদ প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শুক্রবার সকালে পৌঁছায়। বিকেলে রেলস্টেশনে গিয়ে ফারুক, সাহাবুদ্দিন, লিটনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রতি সপ্তাহে জাহেদ চট্টগ্রাম থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা করে নিয়ে যায়। পকেটমারদের কেউ গ্রেফতার হলে জামাল ও জাহেদ মিলে জামিনসহ ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। ’ বলেন মইনুল
ছয়জনকে গ্রেফতার অভিযানে থাকা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত হচ্ছে এদের কাজের সময়। এরা এসময় ফ্রিপোর্ট থেকে দেওয়ানহাট এবং নিউমার্কেট এলাকার বাসে উঠে পড়ে। ভিড়ের মধ্যে মোবাইল এবং মানিব্যাগ পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বাদশা পুলিশকে জানায়, এক বাসে তারা ৭-৮ জন একসঙ্গে উঠে। একজন যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে জটলার সৃষ্টি করে। আরেকজন পকেটের নিচ থেকে হালকাভাবে ঘষতে ঘষতে মোবাইলটি উপরের দিকে নিয়ে আসে। তারপর হুট করে নিয়ে পাশে থাকা আরেকজনকে দিয়ে দেয়। সে আরেকজনকে দেয়। এভাবে মোবাইলটি পার হয়ে যায়। এসময় যদি কেউ ধরা পড়ে, তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তিন-চারজন কাজ করে।
এই পর্যন্ত আটবার জেলে যাওয়া বাদশা জানায়, সে আইফোন দেখলে চুরি করে না। কারণ আইফোন কেউ কিনে না। সাধারণ মোবাইল সেট এবং স্যামসাং ব্র্যান্ডের হলে নেয়।
তুষার, জীবন, নাঈম, বিজয়, নাছির, লিটন, জামাল- নিজের গ্রুপের এই সাতজনের নাম বাদশা পুলিশের কাছে প্রকাশ করেছে।
পকেট কেটে পাওয়া মোবাইলগুলো নগরীর স্টেশন রোডের চোরাই মার্কেটে এবং তামাকমুণ্ডি লেইনের মার্কেটে বিক্রি করা হয় বলেও জানিয়েছে বাদশা।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে জামাল পুলিশকে জানায়, গত ১০ বছরে সে প্রায় তিন থেকে চার হাজার পকেট মেরেছে। দিনে ৪-৫টি কাজ করে। তবে টাকা গ্রুপের সবাই সমানভাবে নেয়।
সর্বশেষ গ্রেফতারের আগে গণপিটুনির শিকার হওয়া জামাল আরও জানায়, পকেটমারের জন্য যাবার আগে সে দুটি মাজার জিয়ারত করে যায়। ফটিকছড়িতে মাইজভান্ডার শরীফের ওরশে গিয়েও সে মোবাইল ছিনতাই করে। প্রাইভেটকারে চড়ে সে মাইজভান্ডারে যায়, যাতে কেউ তাকে সন্দেহ না করে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সোহেল জানায়, তাকে মূলত ধাক্কা দিয়ে ঝামেলা সৃষ্টির জন্যই গ্রুপে নেয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে সে কাজ করে ফারুক গ্রুপে। একসময় ফারুক পোশাক কর্মী ছিল। তারপর পানের দোকান দেয়। ফারুকই তাকে পকেটমারের দলে নিয়ে এসেছে।
পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সাহাবুদ্দিন ও ফারুক গ্রুপ মূলত নিউমার্কেট থেকে টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদে কাজ করে। লিটন গ্রুপ ফ্রিপোর্ট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত এলাকায় কাজ করে। তিন দলনেতা অপরাধ করার জন্য যাদের ম্যানেজ করার দরকার তাদের ম্যানেজ করে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন