গত ২০১৬ সালের জুলাইতে হলিআর্টিজনের ঘটনায় দেশ থেকে বড় বড় বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশীরা চলে যায়। যার কারণে ওই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অর্থ ছাড় হয়নি বলে জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, চলতি বছর সম্প্রতি ওইসব বিদেশীরা দেশে আবার ফিরে আসেন। এখন এসব প্রকল্পে অর্থ ছাড় বাড়ানো হবে। তবে কত বিদেশী চলে গেছেন এবং ফিরেছেন, দেশের স্বার্থে তিনি এসব তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মলেন কক্ষে আজ আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এসময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান, পরিকল্পনা কমিশনের সচিব, বিভাগীয় সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে চালের যে সংকট চলছে এটা মোকাবেলায় সরকার চাল আমদানির উপর শুল্ক প্রত্যাহারের চিন্তা করছে। কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, তবে তা মোকাবেলায় ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে।
তিনি বলেন, দেশে চালের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। কিন্তু শিগগিরই দাম কমে যাবে। বাজারে চাল আছে।
তিনি বলেন, কৃষক যাতে চালের সঠিক দাম পায় এজন্য আইন করে আমদানি ডিউটি আরোপ করা হয়েছিল। এখন সংকট মোকাবেলায় সেটা প্রত্যাহার করারর চিন্তা করছে। পর্যাপ্ত চাল আছে।
তিনি বলেন, আমাদের বরাদ্দ আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা একটা সমস্যা। এখন আমাদের অর্থায়ন আছে, কিন্তু বাস্তবায়নের সক্ষমতা কম। বিশেষ করে বড় প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব বিদেশীদের হাতে। ছোটগুলো আমরা করছি।
তিনি বলেন, আগামী বছর এডিপির আকার হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমরা এটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারবো। বড় প্রকল্পে অর্থ ছাড় বাড়বে। আগামীতে এডিপির আকার এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা হলেও অসম্ভব কিছু হবে না।
আগামী বাজেট বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেটে মানুষের মধ্যে আশংকার কারণ হচ্ছে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এবং আবগারি শুল্কের বিষয়টি। এ দুটি বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষ কষ্ট পায়। সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষের সেবা করা, মানুষকে কষ্ট দেয়া নয়।
মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না এ কথা ঠিক নয়। বিনিয়োগ বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ২৮ দশমিক ৮৯ ভাগ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯ দশমিক ৬৫ ভাগ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ২৭ ভাগ। গত আট বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ এক শতাংশও নিম্নমুখী হতে দেখিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেটের আকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বাজেটের আকার কোনো সমস্যা নয়। মূল সমস্যা হচ্ছে বাজেটে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো হবে কি-না, ব্যাংকে টাকা রাখলে শুল্ক দিতে হবে কি-না, চালের শুল্ক থাকবে কি-না এগুলো মূল সমস্যা। এখন এগুলোই আলোচনা হচ্ছে।
সিপিডির সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, আমরা এশিয়ান টাইগারের চামড়া নয়, এশিয়ান টাইগারই হবো। আগামীতে আমরা নতুন ভিত্তিবছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও হিসাব করবো। এখন সেটি নিয়ে কাজ চলছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জবলেস গ্রোথ হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে যেখানে অনেক বড় প্রকল্প করা হয় তখন কর্মসংস্থান হবে না। কর্মসংস্থান হবে পড়ে। কেননা বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয় অনেক। ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়ে। এখন কর্মসংস্থান হবে না। আমাদের পরিসংখ্যান ঠিকই বলছে, যারা পর্যালোচনা করেছে তারা ঠিক করে নাই। সপ্তম পঞ্চববার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ কর্মের বাজারে আসে। তাই সে তুলনায় বেশি কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে। গত পাঁচ বছর প্রায় এক কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে। চলতি বছরে আশা করছি এক কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থান হবে। কর্মসংস্থান কমেনি। এডিপির বাস্তবায়ন ভালো হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন