বাবার অভাবী সংসার। এসএসসির ফরম পূরণের টাকা জোগাড় না হওয়ায় ১০ম শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় রুকাইয়া খাতুন বিউটিকে। প্রায় ৭ মাস আগে বিয়ে হয় তার।
বিয়ের সময় জামাই মেহেদী হাসানকে বাইসাইকেল ও ঘড়ি ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি বিউটির দিনমজুর বাবা রবিউল ইসলাম। এ কারণে প্রতিদিনই বিউটিকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এর মধ্যে বিউটি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে রোববার রাতে বিউটি তার স্বামীর ফোন থেকে বাবাকে ফোন করে বলেন, 'বাবা আমাকে নিয়ে যাও, ওরা মেরে ফেলবে।'
মেয়ের এমন আর্তনাদ শুনে ভেঙ্গে পড়েন বাবা রবিউল ইসলাম। কিন্তু রাত পোহাতেই শোনেন মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ।
যৌতুকের টাকা না পেয়ে বিউটিকে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন নির্যাতনের পর বালিশ চাঁপা দিয়ে হত্যা করে। পরে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে বলে অভিযোগ করেন রবিউল ইসলাম।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের বনকেশর ফকিরপাড়া গ্রাম থেকে বিউটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এঘটনায় নিহতের পিতা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বিউটির স্বামী মেহেদী হাসান ও তার পিতা সামশুদ্দিনসহ পরিবারের পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ মেহেদী হাসানের মা মজিদা বিবি, বড় ভাই মিলন হোসেন ও মিলনের স্ত্রী শাহিদা আরবীকে গ্রেফতার করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন এলাকার বনকেশর ফকিরপাড়া গ্রামের সামশুদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসানের সঙ্গে একই উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার চুনিয়াপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে বিউটির বিয়ে হয়। এরপর যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে।
মেহেদী হাসাসের মা মজিদা বিবি বলেন, বিউটি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে আত্মহত্যা করেছেন। তাদেরকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
তানোর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম বলেন, নিহতের বাবা মামলা করলে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সঠিক তথ্য জানা যাবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন