বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। “The Guardian view on Bangladesh: the people deserve better” শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভূয়সী প্রশংসা দিয়ে শুরু করে শেষ হয়েছে রাজনৈতিক দীনতার সমালোচনায়।
প্রতিবেদনের শুরুতেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করা হয়। অবশ্য ভারতের কাছে হারের ফলে সেমি-ফাইনাল থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ছিটকে পড়ার কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়।
এরপরও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া নবীন দেশটির উন্নতির পথে এগিয়ে চলায় সাধুবাদ জানানো হয় সম্পাদকীয়তে।
একটি স্বাধীন দেশের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে এই পর্যায়ে আসা যে সহজ কথা নয় এতে সেটিও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, নানা চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ সবসময়ই কাবু থাকে। তাছাড়া দেশটির রয়েছে বিশাল জনসংখ্যা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনার কারণে এরকম প্রাণহানি ঘটলেও ঝড়, জলচ্ছ্বাস থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
একইসঙ্গে স্বাস্থ্য, সাক্ষরতা এবং দারিদ্র বিমোচনেও বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে।
অবশ্য এরপরই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্পাদকীয় বক্তব্যের সূত্রপাত ঘটে। বলা হয়, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বারবার ব্যাহত হয়েছে। ক্ষমতার লোভের কারণে প্রাণহানির নজিরও রয়েছে প্রচুর। ১৯৯১ সালে স্বৈরশাসকের পতনের পর দুই নেত্রীর নেতৃত্বাধীন দুটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শাসনামল পেয়েছে বাংলাদেশ।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও রাজনৈতিক সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ মনে করেন, সেই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো সঠিক ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার কারণে নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ এবং তার স্ত্রী হাসনা জসিমউদ্দীন মওদুদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বিষয়টিও সম্পাদকীয়তে টেনে আনা হয়। বলা হয়, আদালতের রায়ের কারণে তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়।
সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়, মওদুদ আহমেদ শুধু বিএনপির প্রবীণ নেতাই নন, তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবীও ছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তান যখন শেখ মুজিবের নামে নানা মিথ্যে মামলা দিয়েছিল, তখন আইনজীবী হিসেবে মওদুদ তাকে রক্ষা করতে অবদান রাখেন।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাংলাদেশের আশা আর জাতির স্বার্থকে ধুলিস্যাতের জন্য রাজনৈতিক নেতারা কী করতে পারেন সেটিই তার প্রমাণ।
রাজনৈতিক টানাপোড়েন এখনো বর্তমান উল্লেখ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, লেখক, বুদ্ধিজীবী, ভিন্নমত পোষনকারীদের সরকার এখনো সীমানার মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। রানা প্লাজা ভবন ধসে সহস্রাধিক নিহতের ঘটনার চার বছর পেরিয়ে গেলেও বিদেশী ক্রেতারা শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকেই দায়ী করছে।
এরপর আসে জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গ। গতবছর গুলশান হামলায় জঙ্গিরা ২০ জিম্মিকে হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্যোগ নিলেও ব্লগার এবং মুক্তমনাদের খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি সরকার।
নির্বাচনের মাত্র ১৮ মাস বাকি থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খুশি রাখতে চাইছে। পাশাপাশি নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভোট আদায়ে তাদের সুখী ও বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলছে।
সম্পাদকীয়ের শেষে বলা হয়, সব দলেরই গণতন্ত্র এবং নাগরিক অধিকার রক্ষায় পুনরায় নিয়োজিত হওয়া উচিত। বল প্রয়োগ ও অসহিষ্ণুতা পরিহার করা উচিত। তাদের উচিত জনগণের প্রতি নজর বাড়ানো।
এখনো লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়টিও দেশটির জন্য হুমকিস্বরূপ। রফতানি এবং প্রবাসী আয়ও নিম্নমুখী। গার্মেন্টস খাতে ধস নামলে সেটিও দেশটির অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের মানুষ যা অর্জন করে তার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করে। নেতাদের কাছ থেকে ভালো কিছু তাদের পাপ্য।
পরিবর্তন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন