শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় বাঙালি, একজন নাম করা অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক। আপনাদের মনে পড়বে, ২০১৩ সালে তাঁকে বাংলাদেশের ‘মুক্তিযুদ্ধের মিত্র’ হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছিল। আপনাদের এও মনে পড়বে, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন রাওয়ালপিণ্ডি থেকে লন্ডন হয়ে ঢাকায় তথা স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন লন্ডন-ঢাকা যাত্রাপথে তাঁর অন্যতম সঙ্গী ছিলেন মি. বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ১৯৭১-৭২ সালে লন্ডনে ভারতীয় মিশনের একজন কূটনীতিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভদ্রলোকের লেখা মোটামুটি জনপ্রিয় একটি বইও আছে, যেটা মুজিবের সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্কেরই বার্তাবাহক; নাম- ‘India, Mujibur Rahman, Bangladesh Liberation & Pakistan (A Political Treatise).’
সম্প্রতি, গত ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৪৬তম স্বাধীনতা দিবসে, শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন The Wire-এ, যার শিরোনামটা বেশ চমকপ্রদ— বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়— ‘১৯৭১-এর যুদ্ধের পর ৯৩,০০০ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীকে ভারতের ছেড়ে দেওয়ার অব্যক্ত অধ্যায়’ (https://thewire.in/118134/the-untold-story-behind-indira-gandhis-decision-to-release-93000-pakistani-pows-after-the-bangladesh-war/)। সেই নিবন্ধের সূত্রে দুটি কথা বলতেই এ লেখা।
তো কী সেই ‘অব্যক্ত অধ্যায়’? বন্দ্যোপাধ্যায় যা জানাচ্ছেন, সেটার ভারতীয় সমীকরণটা হলো: হয় শেখ মুজিব অথবা কাশ্মীর, বিনিময়ে ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দী!
বাকি কথা আমরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেই শুনতে পারি, তাঁর কলমেই পড়তে পারি। তবে, বলে রাখা ভালো, ইতিহাসটা আগ্রহ জাগানিয়া। মোটা দাগের ইতিহাসে আমরা জানতাম, বঙ্গবন্ধুকে ‘নিঃশর্ত’ মুক্তি দিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু শশাঙ্ক বাবুর বরাতে নতুন কথা জানা যাচ্ছে এখন।
২.
ভূমিকার বাড়তি হিসেবে বলা যেতে পারে, সেই ১৯৭১ সালের চাপান-উতর সময়েও, যখন পূর্ব ও পশ্চিম উভয় রণাঙ্গনে ভারত-পাকিস্তান ৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর নিজেদের মধ্যে ১৩ দিনের নীতিদীর্ঘ এক যুদ্ধে জড়িয়ে পরে, তখন কাশ্মীর আবারও চিরবৈরী দু’দেশের মধ্যকার চিরবিরাজমান আত্মশ্লাঘার একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল। এটা ওই দু’দেশের সম্পর্কের রাজনৈতিক ইতিহাস দেখলেই জানা যায়। এ বিষয়ে আলোকপাত শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও করেছেন।
আত্মসমর্পণরত পাকিস্তানি সেনারা
এখানে বলা উত্তুক্তি হবে না হয়তো যে, মাঝেমধ্যেই যখন অপরাপর দুই দেশের কেউ ‘১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ শব্দাবলী ব্যবহার করেন, তখন আমরা বাংলাদেশিদের অনেকেই ভড়কে যাই! আমরা মনেই করি, আমাদের ৭১-এর সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বুঝি ছিনতাই ও বেহাত হয়ে গেল, ‘মুক্তিযুদ্ধ’কেও বুঝি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হলো! বাংলাদেশে ১৯৭১ নিয়ে ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’য়ের তুলনায় ‘ইমোশোনাল থিংকিং’ বেশি হওয়ায়, মূলত সস্তা জাতীয়তাবাদী ও জনপ্রিয়ধারার ইতিহাস পড়তে আমরা স্বস্ত্বিবোধ করি। যেগুলো আদতে ‘অর্ধেক ইতিহাস অর্ধেক আবেগ’! এই আবেগটাই সাধারণ ভাবনা-ভাবনান্তরে ওই জুজুর কারণ হয়ে উঠেছে।
পাঠ্যপুস্তকগুলোও সেই জ্বর ও জোয়ারের ভুক্তভোগী। আমরা তাই, পাঠ্যপুস্তকে ভারত-পাকিস্তানের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ করার আগ্রহই বোধ করিনি। পাছে আমাদের ‘১৯৭১’ ম্লান ও লঘু হয়ে যায়! স্রেফ জাতীয়তাবাদী হীনমন্যতাবোধ থেকেই সম্ভবত, আমাদের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে কিয়দংশে যুক্ত এই ইভেন্টটিকে সুচতুরভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ, এড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে উল্লেখ করাটা জরুরি। তাতে ভুল বোঝাবুঝি প্রশমিত হয়। পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম ৮ মাস ৮ দিন আমাদের মুক্তিবাহিনীর যে একক লড়াই, সেই বীরত্বটা আরও সূক্ষ্মতরভাবে প্রকাশিত হয়। না-দেখা ইতিহাস পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে যৌক্তিক উপলব্ধি খুব জরুরি জিনিস। যে প্রজন্ম একাত্তরের ওই লড়াই দেখেনি, তার জন্য ইতিহাস পাঠের সবচেয়ে শক্তিশালী আর্কাইভ- আবেগের শব্দমালা নয়, তার ব্যক্তিগত উপলব্ধি।
সেই উপলব্ধি থেকেই বলছি, ভারত-পাকিস্তানের ১৯৭১-এর যুদ্ধপর্বটিকে বোঝার সহজ উপায় হলো ১৩ তিনের ‘সময়কাল’ ও পূর্ব-পশ্চিমের ‘স্থান’টাকে মাথায় রাখা। এটা না করলে, স্রেফ আবেগের বশবর্তী হয়ে পড়তে গেলে খোদ শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাটাও শুরুতেই আপনাকে ধাক্কা দিতে পারে! কেননা, লেখার একদম প্রথম লাইনেই ১৯৭১ সালের ১৩ দিন ব্যাপী যুদ্ধকে তিনি স্বভাবতই ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে, লেখক হিসেবে শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসনীয় কৃতিত্ব ও সততা এই যে, তিনি ২৬ মার্চ-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ মাস ২০ দিনের যুদ্ধকে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ’ হিসেবেই যেমন উল্লেখ করেছেন, তেমনি আবার পাক-ভারত যুদ্ধটির ক্ষেত্রেও কোন অতিরঞ্জন করেননি। তবে, এতো কিছুর পরও, শিরোনামে না থেকেও এই লেখার ‘Untold Subject’ ও অব্যক্ত অভিপ্রায় যে কাশ্মীর-কেন্দ্রিক আলোচনা, সেটা স্পষ্টতই বোঝা যায়।
৩.
কট্টোর জাতীয়তাবাদী ভারতীয়রা মনেই করেন, কাশ্মীর ‘সমস্যার সমাধান’ ওই যুদ্ধবন্দীদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়েই করতে পারতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু, তিনি তা না করে, ১৯৭২ সালের ২ জুলাই পাকিস্তানের সঙ্গে করা সিমলা চুক্তির (বাস্তবায়ন ৪ আগস্ট ১৯৭২) ভিত্তিতে যুদ্ধবন্দীদের ফেরত দেন এবং সেটাও ‘বিনা শর্তে’। সঙ্গে যুদ্ধের সময় পশ্চিম রণাঙ্গনে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মির, পাঞ্জাব ও সিন্ধের যে ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল ভারত, সেটাও চুক্তির সৌজন্য স্বরূপ ফেরত দিয়ে দেয় পাকিস্তানকে।
এসব কারণে কট্টোর জাতীয়তাবাদী ভারতীয়রা শ্রীমতি গান্ধীর সমালোচনাও করেন। কিন্তু, বন্দ্যোপাধ্যায় হদিস দিচ্ছেন, যুদ্ধবন্দীদের আসলে বিনাশর্তে বা নিঃশর্তে পাকিস্তানের কাছে ফেরত দেওয়া হয়নি। সেই শর্তের ইতিহাস যদিওবা আজকের প্রেক্ষিতে ভারত বা পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বহীন, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস চর্চার জন্য তা সমোধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ‘আইকনে’র নাম জড়িত। যাঁকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সদ্যস্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য।
৪.
আমরা জানি, ১৯৭১ সালেই দু’দেশের সীমান্তরেখা ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনারা ভারতে প্রবেশ করেছিল এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুঞ্জ এলাকা দখল করার প্রয়াস চালিয়েছিল। এটা বেশ দ্রুতই ভারতীয় সেনারা বুঝতে পেরে সতর্ক হয়ে যায়। আর দু’মাস পর তো এক অনিবার্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দু’দেশ এবং উভয় রণাঙ্গনেই পরাজিত হয় পাকিস্তান। ফলত, আশায় গুঁড়েবালি, পাকিস্তানের কাশ্মিরও দখল নেওয়া হয়নি, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকেও আর বন্দুকের জোরে উপনিবেশ বানিয়ে রাখা যায়নি। উল্টো যেটা হলো, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণকারী ৯৩,০০০ যুদ্ধবন্দী ভারতীয় বাহিনীর কব্জায় থেকে গেল! ১৯৯৭ সালে লেখা ‘Can Pakistan Survive? The Death of a State’ গ্রন্থে তারিক আলী সংখ্যাটাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে : “Pakistan lost half its navy, a quarter of its air force and a third of its army.”
তো এতোদিন জানা ইতিহাস ছিল এমন যে, বস্তত অর্থনৈতিক কারণে এই বন্দিদের আর নিজেদের দেশে রাখতে রাজি হচ্ছিল না ভারত, বিশেষ করে যখন কি না প্রায় ১০ মিলিয়ন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশি শরণার্থীর দায়িত্বও তাদের নিতে হয়েছে। সে বছর তাদের বাজেট ঘাটতিও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এক্ষণে একটি ঘোরতর ‘অব্যক্ত’ রাজনৈতিক কারণ জানালেন মি. বন্দ্যোপাধ্যায়, যেটা নাকি উচ্চপর্যায়েরও অনেকে তেমনভাবে জানতেন না। তাঁর মতে, ‘সারা বিশ্বের কাছেই তা অজানা ছিল।’
৫.
আমরা জানি, একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তান আর্মি। যুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি বন্দি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। পাকিস্তানের মিলিটারি কোর্টে তাঁকে ফাঁসির সাজাও দেওয়া হয়েছিল এবং নৃশংসভাবে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
তবে, শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, শেখ মুজিব যেন জীবিত অবস্থায় স্বাধীন দেশে আসতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতেই ইন্দিরা যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে ওই নীতি অবলম্বন করেন। সেজন্য নাকি যে কোন মূল্য দিতে রাজি ছিলেন ইন্দিরা এবং তাঁর এ মনোভাব একজন ব্যক্তিই মাত্র জানতেন -তৎকালীন RAW প্রধান রামনাথ রাও। আর এ ব্যাপারে তাঁদের হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে দূতিয়ালিটি করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্য সচিব মুজাফফর হোসেনের স্ত্রী লায়লা হোসেন।
যুদ্ধে পরাজয়ের পর ইয়াহিয়া খান পদত্যাগ করলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জুলফিকার আলী ভুট্টো দ্রুত দেশে ফিরে ২০ ডিসেম্বর পাকিস্তানের চতুর্থ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ভুট্টো ফিরছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এটা জানতে পেরে ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে তাঁর অফিসের দক্ষিণ ব্লকে ওয়ার কেবিনেটের একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রকের উপদেষ্টা দুর্গা প্রসাদ ধর, RAW প্রধান রামনাথ রাও, মূখ্য সচিব পিএন হাসকার ও বিদেশ সচিব টিএন কাউল। ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদ ফেরার পথে বিমান হেথরো বিমানবন্দরে অবকাশ করলে, ভুট্টোর সঙ্গে ভারতের হয়ে কে দেখা করবেন সেটা বৈঠকে জানতে চান ইন্দিরা। শশাঙ্কের মতে, যে দেখার করার একমাত্র অর্থ হলো, শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়ে ভুট্টোর মনোভাব কী সেটা জানার চেষ্টা করা।
এই যে ডিপি ধর, তাঁর আশ্রয়েই ‘অতিথির মর্যাদা’য় ভারতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ছিলেন মুজাফফর হোসেন। যুদ্ধ শুরুর আগে লন্ডনে যাওয়া স্ত্রী লায়লা আর ফিরতে পারেননি দেশে। স্বামী-স্ত্রীর যোগাযোগটা তাই ভারতীয় কূটনৈতিকদের মাধ্যমেই হতো। যিনি মূলত এই মাধ্যমটি হয়ে উঠেছিলেন, তাঁরই নাম শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়, এই ‘অজ্ঞাত অধ্যায়ে’র লেখক।
লায়লাকে দূতিয়ালি করানোর কারণ হলো, একদা তিনি ভুট্টোর খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এটা ইন্দিরাও পর্যন্ত জানতেন। ফলে স্বামীকে ফেরত পাবার আশায় লায়লাও বুঝেশুনেই ‘ব্ল্যাকমেইল’ হতে রাজি ছিলেন! তাকে যে শশাঙ্কই রাজি করিয়েছিলেন এ কাজটি করার জন্য, এটাও ঘটনা পরম্পরায় বোঝা যায়।
তো বিমানবন্দরের লাউঞ্জে লায়লা তাঁর পুরাতন বন্ধু ভুট্টোর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দেখা করলেন। খোলামেলা নানা বিষয়েই কথা হয়েছিল, লায়লা তার স্বামীকে ভারতের কাছ থেকে মুক্ত করানোর ব্যবস্থা করতেও হয়তো ভুট্টোকে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু আসল কথাটা ভুট্টো তাঁকে বলেছিলেন কানে কানে। শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন ভুট্টোর সেই কথাটি, “Laila, I know what you want. I can imagine you are [carrying a request] from Mrs. Indira Gandhi. Do please pass a message to her, that after I take charge of office back home, I will shortly thereafter release Mujibur Rahman, allowing him to return home. What I want in return, I will let Mrs. Indira Gandhi know through another channel. You may now go.”
ভুট্টোর মনোভাব তো জানা গেল। কিন্তু, আসলেই কি মুক্তি পাবেন শেখ মুজিব? নাকি এটা পাকিস্তানের অন্য কোন কৌশল? বিনিময়ে চাইবেনইবা কী ভুট্টো? এসব নিয়ে কয়েকদিন নাকি বেশ ধোঁয়াশায় ছিলেন ইন্দিরা। যদি ভুট্টো পাকিস্তান ফিরে অন্য কোন রাজনীতি করেন!
অবশ্য, তা হবার সুযোগ যে কম ছিল এটাও সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বোঝা যায়। কেননা, যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করার ব্যাপারে ভুট্টোর ওপরেও তো দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই চাপ জেঁকে বসেছিল। ফলে, তিনিও ‘অপরাধী’ শেখ মুজিবকে ‘বিনাশর্তে’ মুক্তির ঘোষণা দিলেন। ১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি মুক্ত হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১০ জানুয়ারি ফিরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন। এর আট মাস পরে চুক্তি অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়া হল পাক যুদ্ধবন্দীদেরও।
শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখাটি শেষ করেছেন তৎকালীন বিচারপতি ও পরবর্তীকালে পরিবর্তিত পরিস্থিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া আবু সাঈদ চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিচারপতি সাঈদ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে একটি সতর্কতামূলক চিঠি লিখেন। চিঠিতে সাঈদ বলেছেন, ইন্দিরা যদি পশ্চিম রণাঙ্গনে একপাক্ষিক যুদ্ধবিরতি দেন, তাহলে বাংলাদেশের যুদ্ধটা অর্ধসমাপ্ত থেকে যাবে! চিঠির শেষটা তিনি করেছেন দুর্দান্ত ইঙ্গিতবাহী এক রূপকে; লিখেছেন, ‘একটি গোখরা সাপের লেজ কেটে ফেললে তার মাথাটা দশগুণ বেশি বিষাক্ত হয়ে ওঠে।’
মি. বন্দ্যোপাধ্যায় লেখাটা শেষ করেছেন অনেকটা নাটকীয় বাক্যে, এই আফসোস নিয়ে যে, চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পৌঁছুতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল!
৬.
শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের এক নতুন ইতিহাস জানালেন বটে। তবে, তাঁর শেষের সুর কর্জ করেই প্রশ্নটা করতে হয়, ইতিহাসের এই অব্যক্ত কথাটা তিনি কি অনেক দেরিতে আমাদের ঠিকানায় পাঠালেন? এজন্য অবশ্য তাঁর দোষ দেওয়া যায় না। আমলাতন্ত্র তো এমনই। উচিত সময়ে সঠিক কথাটি কখনই তারা জনগণকে জানাতে চায় না বা পারে না। অজস্র তথ্য তাদের কূটনীতিক ফাইলের নিচে চাপা পড়ে যায়। যা ঠিক সময়ে জানা গেলে হয়তো ইতিহাসের খেরোখাতা অন্যভাবে লেখা যেতে পারত।
এখন প্রশ্নটা হলো, পাকিস্তান যে ঔদার্য দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বিনাশর্তে মুক্তি দেয়নি, বরং এর পুরোটাই ছিল ইন্দিরা গান্ধীর আন্তরিক সদিচ্ছার ফলাফল -এটা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের বহুধাবিভক্ত রাজনৈতিক লিগ্যাসিতে? শশাঙ্ক বাবুর কাছেও হয়তো এর উত্তর জানা নেই; তা যতই তিনি স্বীকার করে বলুন না কেন, আজকে অবসরে গেছেন বলেই ‘৪০ বছরোধিক আগে’র গোপন কথাগুলো লিখতে পারলেন!
মানলাম, তথাকথিত রাষ্ট্রীয় নীতির কারণে একজন কূটনীতিকের জন্য না হয় কথাগুলো গোপনীয়। কিন্তু, রাজনীতিক হওয়ার পরও ইন্দিরা গান্ধী বা ডিপি ধর কেন কথাগুলো সে সময় উন্মুক্ত করেননি, সেই প্রশ্নটা রেখেই লেখাটি শেষ করলাম।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন