বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, শারীরীকভাবে হেনস্তার পাশাপাশি তার স্বামীকে বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে বসুন্ধরার কর্মীরা। একই সাথে তার সাথে অশালীন আচরনের অভিযোগও আনেন তিনি।
রুমানা নাজনীন বাকের নামের ওই অভিযোগকারী এই বিষয়ে গত ৮ আগষ্ট তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির এই দেশ থেকে আর কি বা আশা করা যেতে পারে? আমি প্রতিবাদ করতে গেলে বসুন্ধরা সিটির কর্মীরা আমার স্বামীর বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে বলে যে, বেশী চিৎকার করবি তো এখানেই তোকে শেষ করে দিব। ক্ষমতার এত দাপট!
বুকে অস্ত্রধরা ছাড়াও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া, অশালীন আচরণ এবং শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগও করেন তিনি। এছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন নিউজ ২৪ চ্যানেলের সাংবাদিক এনে জোরপূর্বক ভিডিও করার অভিযোগ করেন ওই অভিযোগকারী। পরবর্তীতে পুলিশের হস্তক্ষেপে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং থানায় সাধারণ ডায়রী করেন বলেও জানান তিনি।
রুমানা নাজনীনের দেয়া সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-
গতকাল (০৭/০৮/১৭) বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টায় বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে সামান্য একটা খাবার মেনু কার্ড চাওয়াকে কেন্দ্র করে ছোট্ট একটা ঘটনাকে তিল কে তাল বানিয়ে সেখানে অন্যায়ভাবে আমাকে ও আমার স্বামীকে চূড়ান্ত রকমের হেনস্তা করা হয়। তারা (বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ) একটি দম্পতির সাথে বিশেষ করে একজন মহিলা মানুষের সাথে কি করে এমন অসভ্য আচরন করতে পারে আমার জানা নেই। সত্যি আমার জানা নেই। আকস্মিক এই ঘটনায় আমি হতভম্ব, বাকরুদ্ধ এবং আতংকগ্রস্থ। লেভেল-৮ ফুড কোর্টে নবাবি কাবাব নামক ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে থেকে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে তারা (কাস্টমার কেয়ারের প্রতিনিধি) আমাদের (সম্ভবত লেভেল-৩ তে) কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে অভিযোগ করতে বলে। আমরা তাদের কথামত সেখানে যাই। কিন্ত সেখানে কোন সমাধান না হওয়ায় তারা আমাদের বেজমেন্টের অফিসে নিয়ে যায়। আর সেখানে যাওয়াটাই মূলত আমাদের জন্য রীতিমত কাল হয়ে দাড়ায়। কেননা সেখানে আমরা ব্যাতিত সবাই ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। তারা আমাদের এককীত্ব ও দুর্বলার সুযোগ নিয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আমাদের অনুমতি ব্যাতিত আমাদের দুজনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিগত তথ্য থাকতে পারে এবং সেটা বিপদজনক কারো হাতে পড়লে আমাদের জন্য তা লজ্জা ও সমস্যার কারন হয়ে দাড়াতে পারে। কাযর্ত এসব বলেও কোন লাভ হয়নি। তারা আমাদের ব্ল্যাকমেইল করে, ভয় দেখায়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সেখানে উপস্থিত সবাই আমাদের উপর মারমুখো হয়ে উঠে। তারা আমার স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে। আমি প্রতিবাদ করলে তারা উল্টো আমার দিকেও তেড়ে আসে এবং আমাকে উদ্দেশ্য করে আজেবাজে কথা বলে। একপর্যায়ে আমার স্বামী ও বসুন্ধরা গ্রুপের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার (যার কেবিনে এবং যার তত্ত্বাবধানে নিজেদের নিরাপদ ভেবে আমরা বসে ছিলাম) হস্তক্ষেপে এবং তার সহায়তায় আমি ঐ যাত্রায় শারিরীকভাবে লাঞ্চিত হওয়ার হাত থেকে আল্লাহর অশেষ রহমতে রক্ষা পাই।
ক্ষমতার দম্ভে তাদের সেই মূহুর্তে সাধারন সৌজন্যবোধ, বিচার বিবেচনা সব লোপ পেয়েছিল। নাহলে একজন মেয়েকে অসহায় ও দুর্বল পেয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের কোন নিয়ম কানুনের উপর ভিত্তি করে তারা এতটা দম্ভের সাথে তাদেরই অফিসের সবচেয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সামনে এরকম অশালীন আচরণ করার স্পর্ধা দেখাতে পারে? সেই মূহুর্তে তাদের সাধারণ শিষ্টাচার বলে সত্যি কিছু ছিলনা। এতকিছু করেও তাদের বোধহয় সাধ মেটেনি। ষোলকলা পূর্ণ করতে এবং আমাদের চূড়ান্ত রকমের হেনস্তা করতে ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে নিউজ ২৪ চ্যানেল থেকে সাংবাদিক এনে অনুমতি ব্যাতিত জোরপূর্বক ভিডিও করে। যেন জোর যার মূলক তার! এছাড়াও যে যার মত নিজ নিজ মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে অনবরত আমার ছবি তুলতে থাকে।
একজন ভদ্র মহিলার অনুমতি ব্যাতিত তার ছবি তুলা যে সাধারণ শিষ্টাচার বহির্ভূত অপরাধ এই সামান্য নূন্যতম বোধও তাদের ছিলনা। ভেবে অবাক হই এই ধরণের অসভ্য কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকজনকে বসুন্ধরা গ্রুপ কি করে নিয়োগ দেয়! ক্ষমতার এত দাপট!
বিচারহীনতার সংস্কৃতির এই দেশ থেকে আর কি বা আশা করা যেতে পারে? আমি প্রতিবাদ করতে গেলে আমার স্বামীর বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে বলে যে, বেশী চিৎকার করবি তো এখানেই তোকে শেষ করে দিব। ক্ষমতার এত দাপট! আমার ভাগ্য ছিল যে সেখানে অন্তত একজনের বিবেকবোধ,বিচার বিবেচনা তখনো জীবিত ছিল। নইলে সেদিন কপালে যে কি লেখা ছিল, আমি জানিনা।
বসুন্ধরা গ্রুপের সেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার (রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার তার নাম পদবি অবশ্য কিছুই জানিনা। কেননা সে নিজ থেকে তার পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল) অনুমতি নিয়ে আমি তেজগাঁও থানায় ফোন দেই ও পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সাহায্য চাই।
পরবর্তীতে তেজগাঁও থানা থেকে (সিরা-৬.১) এস আই হাসানকে পাঠিয়ে আামদের রক্ষা করে।আল্লাহর অশেষ রহমতে পুলিশের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে সেখান থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যার দিকে তেজগাঁও থানাতে এসে জিডি করলাম। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সুতরাং বসুন্ধরা সিটি শপিং মল হতে সবাই সাবধান! বিশেষ করে ফুড কোর্ট এর বিষয়ে অতি সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন