ওয়ার্ল্ড হেরিটজ ও দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন্দকে ধ্বংস করে দিতে সরকার গৃহিত নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেছেন, ‘ক্রমেই সুন্দরবন এলাকায় শিল্প কারখানার পরিমাণ বাড়ছে। সুন্দরবনের প্রতি সরকারের কোনও রকম ভালোবাসা নেই। থাকলে পরিবেশ বিনাশী কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরকার সরে আসতো। সরকার সুন্দরবনকে মেরে ফেলতে চায়।’
তিনি বলেছেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় আগে থেকেই ১৮০টি শিল্প কল-কারখানা ছিল৷ এখন নতুন করে আরও ৩২০টি শিল্প কারখানাকে অনুমোদন দেয়া হলো৷ আরও ১৫০ জনকে দেয়া হলো শিল্প প্লট৷ সঙ্গে সরকারের মাথায় রামপাল প্রকল্প তো আছেই। এমনটা হলে বাঁচবে কি সুন্দরবন?’
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ সভায় সুন্দরবন ঘেঁষে ৩২০টি শিল্পকারখানাকে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি৷ অথচ সম্প্রতি ইউনেস্কোও বলেছে, কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) ছাড়া এখানে ভারী শিল্প ও স্থাপনা করা যাবে না৷
এক তথ্যে জানা গেছে, সুন্দরবন এলাকায় ১৮৬টি শিল্প কল-কারখানা ছিল৷ যেগুলো পরিবেশ বিষয়ক কমিটির বৈধতা পেয়েছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মৌজার সীমানা চিহ্নিত করে ২০১৫ সালে গেজেট প্রকাশের পর, পরিবেশ অধিদফতর সেখানে ১১৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক ছাড়পত্র দিয়েছিল। সম্প্রতি নতুন করে আরও ১৬টি শিল্প কারখানাকে অনুমোদন দিতে বলেছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮টি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বোতলজাত করার কারখানা বা এলপিজি প্ল্যান্ট, যা মারাত্মক দূষণকারী বা লাল তালিকাভুক্ত হিসেবে বিবেচিত৷ বাকি ৮টি শিল্প বড় ও মাঝারি আকৃতির৷
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই এলাকায় বৃহদাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) থেকে সুপারিশের পরও নতুন এই ১৬ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি।
সুন্দরবনে রামপাল প্রকল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর অনাপত্তির কথা তুলে ধরে রবিবারের বৈঠকের পর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংস্থাটি রামপাল প্রকল্পের ব্যাপারে তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করেছে। তাই আমরা মনে করছি, এখন সেখানে কলকারখানা নির্মাণেও ইউনেস্কো কোনও আপত্তি করবে না। তবে যারা সুন্দরবন সংলগ্ন শিল্পকারখানা গড়ে তুলবেন পরিবেশ রক্ষার ব্যাপাটি তাদের খুবই গুরুত্বের সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।’
এদিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে করা চারটি সুপারিশই মেনে নিয়েছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি। মংলাসহ ইসিএ এলাকায় সিমেন্ট, তামাক, তেল পরিশোধন, ইটভাটার মতো লাল শ্রেণিভুক্ত যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে৷ তবে এগুলোতে কঠোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা যেমন সার্বক্ষণিক বর্জ্য, পানি ও বাতাস পরিশোধনযন্ত্র (ইটিপি, ডাব্লিউডাব্লিউটিপি ও এটিপি) করতে বলা হয়েছে৷
এদিকে সুন্দরবনের রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে সরকারের একমুখী নীতির সমালোচনা করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার নিজেই আইন ভঙ্গ করছে। দেশ ও বিশ্ববাসীকে দেয়া সুন্দরবন রক্ষার প্রতিশ্রুতি থেকেও সরে যাচ্ছে সরকার। তারা ইউনেস্কোর রিপোর্টও ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এইসব কলকাঠি নাড়ানো হচ্ছে। এই সরকারের কাছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন মোটেই নিরাপদ নয়।’ সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন