শিক্ষক, চাকরিজীবী, ঠিকাদার, ব্যবসায়ীসহ প্রায় ২০ জনের কাছে সর্বহারা পার্টি পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে এমন চাঁদা দাবির ঘটনা।
ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আবার কেউ কেউ চাঁদার টাকা পরিশোধও করেছেন বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে কালিগঞ্জ উপজেলাজুড়ে।
কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের সোনাটিকারী গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে নলতা বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মাহাবুবল হক জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর থেকে পরপর তিনবার তার নম্বরে ফোন করা হয়। এ সময় এক ব্যক্তি নিজেকে সর্বহারা পার্টির সদস্য পরিচয়ে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জীবননাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় বুধবার বিকেলে তিনি কালিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
নলতা শরীফের ইবরাহীম হোসেনের ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী হাবিবুলাহ জানান, বুধবার সকাল ১০টায় তার কাছে সর্বহারা পার্টির সদস্য শ্যামল পরিচয়ে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল থেকে ছয় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। সন্ধ্যার মধ্যে চাঁদার টাকা না দিলে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় রাতে বাড়িতে তার মরদেহ সকলে দেখতে পাবে বলে হুমকি দিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বুধবার কালিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
নলতা বাজারের ব্যবসায়ী মাহাবুবর রহমান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার কাছে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে সর্বহারা পার্টির সদস্য আবুল হোসেন পরিচয়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। দুপুরের মধ্যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে না দিলে হত্যা করে মরদেহ বাড়ির পাশে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বুধবার বিকেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি।
নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সর্বহারা পার্টির সদস্য শ্যামল পরিচয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে এমনকি মরদেহ গুম করে দেয়ার হুমকি দেয়। তবে তিনি এখনো থানায় ডায়েরি করেননি।
একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পরিতোষ চক্রবর্তী ও কর্মচারী আহছান রাজীব জানান, গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ০১৯৯৫-৭৬৯২৬৯ মোবাইল ও ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে কখনও শ্যামল আবার কখনও আবুল হোসেন পরিচয়ে সর্বহারা পার্টির পক্ষে তিন লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করা হয়। বিকেলের মধ্যে চাঁদা না দিলে জান খালাস করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। তবে তারা বিকাশে টাকা দিয়েছেন এমন খবরের সত্যতা জানতে চাইলে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। যদিও তারা বিকাশে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া শুইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, গত সোমবার বিকেল ৩টার সময় তার কাছে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে শ্যামল পরিচয়ে সর্বহারা পাটির নামে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওদিন সন্ধ্যায় তাদের দেয়া একটি বিকাশ নম্বরে ১২ হাজার টাকা দেন।
একইভাবে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মোমিনের কাছে বুধবার সকাল ১০টার দিকে একটি বাংলা লিঙ্ক নম্বর থেকে সর্বহারা পার্টির সদস্য পরিচয়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে কাকুতি মিনতি করে দুপুরে একটি বিকাশ নম্বরে এক হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাতক্ষীরা শাখার কর্মকর্তা নলতা ইউনিয়নের ইন্দ্রনগর গ্রামের নূর ইসলাম ও নলতার ঠিকাদার জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে চার লাখ টাকা করে চাঁদা চাওয়া হয়। বিষয়টি তারা প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছেন।
নামপ্রকাশে অনচ্ছিুক নলতা এলাকার কমপক্ষে ১০ জন ব্যক্তি জানান, তাদের কাছে গত এক সপ্তাহে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা চাওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে জীবননাশের হুমকি দেয়ায় গোপনে কিছু টাকাও দিয়েছেন তারা।
কালিগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল জলিল জানান, সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় বুধবার থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে কালিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লস্কর জায়াদুল হক জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি প্রতারক চক্রের কাজ বলে ধারণ করা হচ্ছে। তারপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান ওসি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন