মায়ের হত্যার বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে দুই শিশু। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার বঙ্গবন্ধু অডিটারিয়ামে বৃহস্পতিবার দুপুরে এই বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং সন্দেহজনক ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে নিহত আকলিমা খাতুনের বাবা আব্দুল করিম বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। থানায় হত্যা মামলা দায়ের হলেও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এ ঘটনায় জড়িতরা।
এ ঘটনায় জড়িতরা অর্থবিত্ত আর প্রভাবশালী হওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে আর মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি আর হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
সংবাদ সম্মেলনে মায়ের হত্যার বিচার ও দোষীদের গ্রেফতারে প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে শিশু রকিবুল হাসান (১২) ও তামান্না (৪)।
মামলার এজাহার ও সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, গত ১৩/১৪ বছর পূর্বে ঘাটাইলের দিগর ইউনিয়নের কৈডলা গ্রামের হযরত আলীর ছেলে আব্দুল লতিফের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন একই উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের আব্দুল করিমের মেয়ে আকলিমা খাতুন (২৮)। এই দম্পতির পরিবারে জন্ম নেয় ছেলে রকিবুল হাসান (১২) ও মেয়ে তামান্না (৪)।
লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, দিনমজুর মো. লতিফের সঙ্গে প্রতিবেশী মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে ইমান আলী, হাছেন আলী, আজমত আলী ও ফয়েজ আহম্মেদের ছেলে মনা মিয়ার দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল।
এ বিরোধের জের ধরে বিবাদী পক্ষ মাঝে মধ্যে লতিফও তার স্ত্রী নিহত আকলিমাকে মারপিট এবং হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে বাদী পক্ষ স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে গেলে তারা পুলিশকে জানাতে বলেন।
আসামি পক্ষ সরকারদলীয় সমর্থক হওয়ায় গ্রামবাসী তাদের ভয় পায়। পরে বাদী গত ২২ মে ঘাটাইল থানায় চারজনকে বিবাদী করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বিবাদী পক্ষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
বিষয়টি ডিজি তদন্ত কর্মকর্তা ঘাটাইল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. হান্নানকে জানান। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে গত এক আগস্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় লতিফের স্ত্রী গৃহবধূ আকলিমা প্রকৃতিক ডাকে বাইরে আসেন।
এ সময় ওঁৎপেতে থাকা বিবাদী পক্ষ ওই গৃহবধূকে ধারাল অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং আঘাত করে ফেলে রেখে যায়।
পরে তার ডাক চিৎকারে স্বামী লতিফ ঘর থেকে বাইরে আসলে বিবাদীগণদের ধারাল অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে পালিয়ে যেতে দেখেন এবং তার স্ত্রীকে উঠানে রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দেন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এ ব্যাপারে বাদীর লিখিত এজাহার না নিয়ে পুলিশ তাদের ইচ্ছে মতো অজ্ঞাত আসামি দিয়ে একটি মামলা দায়ের করে। বিষয়টি জানার পরে বাদী পক্ষ ঘাটাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিনের কাছে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে উল্টো স্বামী লতিফকে আটক করে।
লতিফকে হত্যার দায় স্বীকারের জন্য নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালায় পুলিশ। সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে মামলা করতে চাইলে পরিবারের সকলের অবস্থা একই হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানে খুনের দায় নেয়ার জন্য লতিফকে কঠোর নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে জীবননাশের হুমকি দেয় পুলিশ।
এ অবস্থায় বাদী নিজের স্ত্রী হত্যার বিচার না পেয়ে উল্টো আসামি ও পুলিশের নির্যাতনের ভয়ে নিজের প্রাণ রক্ষার্থে দুই শিশু সন্তান নিয়ে বিচারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এ ব্যাপারে ঘাটাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন মামলাটি সঠিকভাবে রুজু করেছেন দাবি করে বলেন, এই মামলায় যেন কোনো নিরাপরাধ লোক হয়রানির শিকার না হয় সেভাবেই তদন্ত চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন