জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সরদার আমিরুল ইসলাম সাগরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকের বহিষ্কারের ব্যাপারে দলটির দফতর সম্পাদক বলেন, ‘ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী আরও জানান, ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরদার আমিরুল ইসলাম সাগরকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় তার সঙ্গে ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যে কোনও রকমের সাংগঠনিক যোগাযোগ না রাখতে বলা হয়েছে।’ দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, ‘ এটা সংগঠনের অভ্যন্তরের বিষয়, তাই বলা যাচ্ছে না।’
এ সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির কোনও বৈঠকে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার বলেন, ‘সভাপতি ও সেক্রেটারি বলেছেন, তাই আমি বিবৃতি পাঠিয়েছি। হয়তো কোথাও তারা বৈঠক করেছেন।’ এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আমিরুল ইসলাম সাগর
বহিষ্কার হওয়ার ব্যাপারে ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মাত্রই আপনার মুখে শুনলাম। তবে কী কারণে, এখন বলতে চাচ্ছি না।’
ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ আগস্ট ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম সাগর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন,‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সেনানী শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।’ এই স্ট্যাটাসের পর তার ফেসবুকের ওয়ালে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীর সমালোচনামূলক কমেন্টস পড়ে। একদিন পর (১৬ আগস্ট) সাগরকে ফোন করে স্ট্যাটাসটি সরিয়ে দিতে বলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। পরে স্ট্যাটাসটি নিজের ওয়াল থেকে সরিয়ে নেন আমিরুল ইসলাম সাগর।
উল্লেখ্য, আমিরুল ইসলাম সাগর ছাত্রদলের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে ১৫ আগস্ট দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কেটেছি এবং এক হাজার ছেলেকে ছাত্রদলের সদস্য করি।’
১৫ আগস্ট দেওয়া স্ট্যাটাসের কারণে সংগঠনে ও ফেসবুকে দলীয় নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়লে, ১৬ আগস্ট আরও একটি স্ট্যাটাস দেন আমিরুল ইসলাম সাগর। তিনি লেখেন, ‘ভোটের হিসাব বাদ দিলেও, যে সভ্য আচরণের উপর ভিত্তি করে বিএনপি দাঁড়িয়ে আছে তার নিরিখেও সবাইকে যার যার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া অতি জরুরি। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এমনকি তারেক রহমান কখনও এই সভ্য আচরণের বিচ্যুতি ঘটান নাই। আমাদেরও সেই পথ অনুসরণ করা উচিত। কোন স্বৈরাচার বা স্বৈরাচারী সরকারকে ছাড় নয়, তবে কোন ব্যক্তি বিদ্বেষ নয়।’
সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি দিয়ে ১৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করেন সাগর
১৫ আগস্ট দেওয়া স্ট্যাটাসটি সরিয়ে দিয়ে, সেই স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যা দিয়ে আমিরুল ইসলাম সাগর আরও লিখেছেন, ‘১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যবার্ষিকী নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। আমি মনে করি এটাই আমার শিষ্টাচার, এটাই আমার রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ। তবে এই পোস্টে সারা দেশে আমার অসংখ্য জাতীয়তাবাদী ভাই-বন্ধু-সহকর্মী-সহযোগী-শুভাকাঙ্খী আহত হয়েছেন। তারা আমাকে পোস্টটি সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছেন। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পোষ্টটি সরিয়ে নিলাম। মানুষের ভালবাসার জন্যই রাজনীতি, মানুষের ভালবাসাই আমার পাথেয়।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কিনা, এ বিষয়ে ছাত্রদলের প্রথম সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংগঠন যেটা গ্রহণ করে না, পদধারী হিসেবে আমার গ্রহণ করা ঠিক না। আর স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণেই যে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেটিও তো বিবৃতিতে বলা হয়নি। ফলে আমি সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক বলতে পারছি না, কেন বহিষ্কার করা হল।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘এ বিষয়টি নিয়ে বলা যাচ্ছে না, কারণ ব্যাপারটি আমি জানি না।’
ছাত্রদলের নেতাদের একাংশের অভিমত, ‘‘সাগরকে বহিষ্কার করে মূলত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনাকেই পরোক্ষভাবে অমান্য করেছে ছাত্রদল। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের কাউন্সিলে খালেদা জিয়া পরিষ্কার করে বলেছিলেন, ‘শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ মরহুম জাতীয় নেতাদের অবদানের কথা স্মরণ করছি। তারা দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিলেন।’ তিনি এও বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে এবং তাদের মর্যাদা ও স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ হবে জাতীয় ঐক্য ও প্রেরণা সৃষ্টির উৎস।’’
পাঠক মন্তব্য
Too many stupid people in the BNP leadership. My advise to Shgor is go to Mirja Fokrul Islam and complain.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন