দশ মাস দশ দিন ছেলেকে গর্ভধারণ করেছেন মা। বয়সের ভারে সেই মামতাময়ী মা এখন হাঁটতে পারেন না। মিয়ানমারে বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে সবাই যখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন তখন তো একশ বছরেরও বেশি বয়সী সেই মা নিরূপায়। কিন্তু নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেলে কিভাবে মাকে ফেলে আসবেন। সামনে ভয়াবহ বিপদ জেনেও মাকে কাঁধে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওয়া হয়েছেন ছেলে মোহাম্মদ আলম (৩৫)।
তিন দিন মাকে কাঁধে নিয়ে তিনি বুধবার নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফ এসেছেন। শাহপরী দ্বীপ বাজার এলাকায় রোহিঙ্গাদের ঢলের মাঝে দেখা হয় আলম ও তার মা ছবিলার সঙ্গে।
মাকে কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত আলম। কিন্তু চোখে-মুখে ক্লান্তির প্রকাশ নেই। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে, পরম মমতায় মাকে আগলে নিয়ে একটি চেয়ারে বসতে দেন। এক পর্যায়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন তিনি।
কান্না থামছেই না, কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকনে, ঘর-বাড়ি সব সেনাবাহিনী জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরিরবারের ১৬ সদস্যকে নিয়ে তিনি পালিয়ে এসেছেন। সবাই হেঁটে আসতে পারলেও মাকে কিভাবে আনবেন চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে পড়েন। মাকে তো আর মৃত্যুর মুখে ফেলে আসতে পারেন না। এক পর্যায়ে মাকে কাঁধে নিয়েই রওয়ানা দেন বিপদসঙ্কুল দীর্ঘ পথ। তিন দিন জঙ্গল-পাহাড় পাড়ি দিয়েছেন মাকে কাঁধে নিয়েই।
বললেন, ‘মাঝে মাঝে আর পা দুটো চলতে চাইছিল না। কিন্তু মাসহ পরিবারের ১৬ সদস্যকে বাঁচানোর আকুতি আমাকে শক্তি জুগিয়েছে। আমার মায়ের দোয়া আমার সঙ্গে ছিল। ফলে আমি জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছি। পথে কোনো সমস্যা হয়নি।’
মাকে নিয়ে এখন কোথায় যাবেন- এমন প্রশ্নে আবার কাঁদতে থাকেন আলম। টল টল করে চোখের পানি পড়ছে। তার কান্নার সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরাও হাউ মাউ করে কাঁদছেন। এক পর্যায়ে মা ছকিনা খাতুরে চোখ বেয়ে পানি গড়াতে থাকে, কিছু বলতে চাচ্ছিলেন- কিন্তু তিনি তো বয়সের ভারে কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন অনেক আগেই।
এক পর্যায়ে আলমের ছোট ভাই নুর হোসেন (২৫) বলেন, বৃদ্ধ মা ও পরিবারের ১৬ সদস্যকে নিয়ে কোথায় যাবো, কিছুই জানি না। আল্লাহ যেদিকে নেবে, সেদিকে যাবো। ছোট ভাইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই আলম বললেন, আমরা এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের দিকে যাবো। সেখানে একটু আশ্রয় চাইবো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন