আতপ চাল আমদানি এবং ওএমএস’র মাধ্যমে তা বিতরণ নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কারণ বাঙ্গালিরা ভাতের খাদ্যাভ্যাসের সাথে আতপ চালে খুব একটা অভ্যস্ত না। তবে সরকার এবিষয়ে তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ ও খাদ্য বিশেষজ্ঞরা ভাতের চাল হিসাবে আতপ চাল আমদানির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সরকারের দায়িত্বশীলরা দেশের মানুষকে আতপ চালে অভ্যস্ত হতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
সম্প্রতি চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন এবং ভিয়েতনাম থেকে তিন লাখ টন আতপ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি খোলা বাজারেও আতপ চাল বিক্রি শুরু হয়েছে।
যদিও খোলা বাজারে আতপ চাল বিক্রিতে সাড়াতো মেলেইনি, উল্টো ক্রেতারা তাদের বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
চাল বিশেষজ্ঞরা এবং অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশের মানুষের খাদ্যাভাসের সাথে ভাতের চাল হিসাবে আতপ চাল কখনও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কেবল বিশেষ আয়োজন অনুষ্ঠানাদিতেই মানুষ আতপ চাল ব্যবহার করেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু সংখ্যক মানুষ কেবল ভাতের চাল হিসাবে আতপে অভ্যস্ত।
তারা বলেন, দেশে কোনও ভয়াবহ দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ নাই যে জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ ভাতের চাল আমদানি না করে আতপ চাল আমদানি করতে হবে।
এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. সদরুল আমীন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আতপ চাল চলে না। আতপ চালে স্বাদ কম।’
তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ তরকারি বেশি খায়, ভাতের সাথে বেশি তরকারিতে অভ্যস্ত, তাই ঝরঝরে ভাত খোঁজে। যা আতপে সম্ভব না।’
‘এছাড়া আতপ চালে খুদ বেশি হয়। আতপ হজম হয় তাড়াতাড়ি। পেট ভরে খেলেও আধা ঘণ্টা পরই মনে হয় পেট খালি। যা আমাদের দেশের বিশেষ করে শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষও চায় না,’ মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) এর চিফ সায়েন্টিস্ট ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘আতপ চালতো সৌখিন চাল। পিঠা পুলি পোলাওয়ের চাল। বিশেষ অনুষ্ঠানের চাল।’
তিনি জানান, আতপে এমাইলুজ নামে শর্করা জাতীয় উপাদান কম থাকে। চাল সেদ্ধ করলে এমাইলুজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এমাইলুজের মাত্রা ২০ এর কম থাকায় আতপ চালের ভাত আঠালো হয়।
‘আর সেদ্ধ চালে এমাইলুজ ২৫ এর পরিমাণ বেশি হলেই ভাত ঝরঝরে হয়ে যায়, যা আমাদের দেশে প্রচলিত,’ বলেন এই বিজ্ঞানী।
এবিষয়ে সরকারের সব শেষ অবস্থান জানতে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার সকাল খাদ্যমন্ত্রী ও খাদ্য সচিবের সাথে অসংখ্যবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আতপ চালের ভাত খাওয়া নিয়ে তার যুক্তি ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন পরিবর্তন ডটকমের কাছে।
আতপ চাল নিয়ে যা বলেন ড. রাজ্জাক
‘আমাদের দেশের মানুষের আতপের ধারণাই নাই। ভিয়েতনামের আতপ চাল সম্পর্কে কোনও ধারণাই নাই। এটা (যে চাল আমদানি করা হবে) ভাল চাল। আমি যখন মন্ত্রী, আমরা চার লক্ষ টন আতপ চাল ভিয়েতনাম থেকে আনছিলাম, এটা ভাল। তখন প্রথমে নিতে চায় নাই। পরে নিছে।’
‘একটা সমস্যা আছে। যেটা ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে আমারে বলছিলো। বলছিলো, এই চালের সাথে সবাইরে একটা একটা রাইস কুকার কিনে দেন।’
‘রাইস কুকারে এ চালের ভাত ঝরঝরে হয়। চালটা রান্না করলে ভাত গলে যায়। এতো সুন্দর চাল! ভাত এতো সুন্দর হয়! আমি নিজে থেকে দাঁড়িয়ে চাল দিছি আমার বাড়িতে। শতশত মহিলা এসে বলে যে, চাল দিছেন, ঘি কই? ঘি দেন। এতো ভাল চাল ঘি ছাড়া খাওয়া যাবে না।’
‘একটু কেয়ারফুলি রাঁধতে হয়। মানুষ শিখে ফেলবে। দুই তিন দিনেই মানুষ শিখে যাবে। বিদেশে গেলে তো আমরা আতপ চালই খাই। আমরা থাইল্যান্ডের জেসমিন চাল বা বাসমতি চাল সারা পৃথিবীতে খাই না? আতপ হলেও আপনি বুঝতে পারবেন না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন