বাগেরহাট : উচ্চতায় নয়, মূর্তির সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পূজামন্ডপ হবে এবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে। আয়োজকদের দাবি, শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা হবে এটি।
এই পূজামন্ডপের আয়োজক ডা. দুলাল শিকদার ও তার ব্যবসায়ী লিটন শিকাদারের দাবি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় পূজাম-প। গত বছর ছিল ৬০১টি প্রতিমা। এবছর এই ম-পে ৬৫১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
২০১০ সাল থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে বাংলাদেশের বৃহত্তম দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাগেরহাটে দুর্গা উৎসব মানেই শিকদার বাড়ির দুর্গা পূজা। লিটন সিকদার নামে এক ব্যবসায়ী মহাধূমধামে এই দুর্গা পূজার আয়োজন করে আসছেন। দিন দিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর হাকিমপুর গ্রামে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা দেখতে আসে।
প্রতিমা শিল্পি মিলন বাছাড় বলেন, এখানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চার যুগের দেব দেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। পাঁচ মাস ধরে ১৫ জন কারিগর তাদের নিপূণ হাতে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। শেষ সময় রং তুলির কাজ পুরোদমে চলছে। এবছর এখানে বিশেষ আকর্ষণ থাকছে পুকুরের মাঝখানে ৪০ ফুট উঁচু ভাসমান মন্দির। যেখানে সবার উপরে থাকবে শীব ঠাকুর। এরপর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও সারদা দেবী। আরও থাকবেন স্বামী বিবেকানন্দ।
স্থানীয় বাসিন্দা খুলনা বেতারের নাট্য শিল্পি সুব্রত মজুমদার বলেন,‘শিদারবাড়ির পূজামণ্ডপের জন্য হাকিমপুর গ্রাম আজ দেশ-বিদেশে সবার কাছে পরিচিত। আমরা সব ধর্মের মানুষ এই দুর্গা উৎসবে মিলিত হই। দুর্গা উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় তার জন্য আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি। স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, শিকদারবাড়ীতে এমন দূর্গাপূজা আয়োজনের জন্য আমরা দারুণ খুশি। শিদারবাড়ীর পূজার জন্য আজ আমাদের হাকিমপুর গ্রাম দেশবিদেশে সবার কাছে পরিচিত হয়েছে। আমরা সব ধর্মের মানুষ এই দূর্গোৎসবে মিলিত হই। দূর্গোৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় তারজন্য আমরা সবাই সহযোগিতা করে থাকি।
আয়োজক লিটন সিকদার বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমি দূর্গাপূজার আয়োজন করে আসছি। প্রথম বছরে ২০১টি প্রতিমা দিয়ে শুরু হয়। স্থানীয় লোকজনের উৎসাহে দিনদিন প্রতিমার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর হাকিমপুর গ্রামে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরের দর্শনার্থীরা দূর্গাপূজা দেখতে আসে। সকল ধর্মের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় দূর্গোৎসব। এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। বাগেরহাটের প্রত্যন্ত হাকিমপুর গ্রামের এই পূজাটি প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বলে দাবী করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার বলেন, বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলায় এবছর প্রায় ছয় শতাধিক মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের মত এবছরও জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে। দূর্গাপূজা মানেই এখন বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ীর দূর্গাপূজা। শিদারবাড়ীর পূজাটি আকর্ষণীয় হওয়ায় এখানে দর্শণার্থীদের বিপুল সমাগম ঘটে। এছাড়াও ফকিরহাটের বেতাগার মমতলা ও পোলঘাট দূর্গামন্ডপে বেশি প্রতিমার পূজা হবে। উৎসবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বাগেরহাট হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাড. মিলন কুমার ব্যানার্জি জানান, দুর্গোৎসবে উপলক্ষ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি ভাল ভাবে চলছে। বিগত বছরের তুলনায় এবছর মহা-আড়ম্বর পূর্ণ হবে আমাদের এ অনুষ্ঠান। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই এ উৎসবে বাগেরহাটের সকল ধর্মের মানুষ সমানভাবে আনন্দ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাট জেলায় এবছর ৬০৫টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন সারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে বাগেরহাটে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গোৎসব শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন