বন্যা সম্পর্কে আগাম তথ্য বা হাইড্রোলজিকাল ডাটা চীনের কাছ থেকে না পেয়ে ভারত ব্রহ্মপুত্র নদীতে ল্যাব ভাসাতে যাচ্ছে। এধরনের আগাম তথ্য না পাওয়ায় ভারতে বন্যা বা পানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারছে না। স্পুটনিক
বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের মধ্যে এধরনের পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলেন আসছিলেন নদী বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু তা হয়নি। উপরন্তু ভারত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চীনও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। আর বর্ষা মৌসুমে ভারত ও চীনের পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার ধকল ও দুর্যোগ সইতে হচ্ছে ভাটির এ দেশকে।
শুকনো মৌসুমে ভারত থেকে পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় কৃষি, অর্থনীতি ও পরিবেশ মার খাচ্ছে চরমভাবে। নদীর পানি প্রত্যাহার নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধিতা বাড়ছে। এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদীতে প্লাবনভূমিতে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করতে ভারত একটি ভাসমান পরীক্ষাগার স্থাপন করতে যাচ্ছে ভারত। চীন এধরনের তথ্য ভারতকে দিতে অস্বীকার করায় দেশটি এ বিকল্প উদ্যোগ নিয়েছে।
এধরনের প্রকল্প ভারতে এই প্রথম ও বড় ধরনের সমীক্ষা যাচাইয়ের উদ্যোগ যা ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি প্রবাহের গতি প্রকৃতি সহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে এবং এর ফলে এ নদীর ওপর ভিত্তি করে সঠিক বন্যা ব্যবস্থাপনা নেওয়া সম্ভব হবে।
এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রহ্মপুত্র জীববৈচিত্র এবং জীববিদ্যা নৌকা’ বা বি ফোর। এ ধরনের ভাসমান পরীক্ষাগারে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করবেন। নদীটির বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ভিদ, জীবাণু ও পানি সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ ও উপাত্ত বের করা হবে যা ভারতের বিভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পূরণ করবে। ভারতের বায়োটেকনোলজি বিভাগের সচিব কৃষ্ণস্বামী বিজায় রাঘাবান জানান, এধরনের তথ্য ও গবেষণা বন্যা ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।
একটি বিশাল বার্জকে ওপর এধরনের ভাসমান পরীক্ষাগারে রুপান্তরিত করা হয়েছে। নদী ও তৎসংলগ্ন স্থানের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে একটি তথ্যবহুল উপাত্ত পাওয়া যাবে। নদী নিয়ে গবেষণা করে ভারতের এমন সব প্রতিষ্ঠান এ ভাসমান পরীক্ষাগার থেকে তথ্য পাবে। তথ্য সরবরাহ করা হবে আন্তর্জাতিক পরীক্ষাগারগুলোকে।
আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ভাসমান পরীক্ষাগারটি পানিতে ভাসানো হবে। অরুণাচল প্রদেশের পাসিঘাট থেকে বি ফোর যাত্রা শুরু করে চলে যাবে ডিব্রুগড়, নিমাতিঘাট, তেজপুর ও গৌহাটি। এছাড়া ভারত সরকার মোবাইল বা ছোট আকারের নৌকায় ভাসমান পরীক্ষাগার ভাসিয়ে সেগুলো থেকে তথ্য বি ফোরে পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
তিব্বত থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি এবং বাংলাদেশে প্রবেশের আগে তা ভারতে প্রবাহিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর উত্তর-পূর্ব ভারতে বন্যার প্রধান কারণ ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি। বর্ষা মৌসুমের আগেই চীন ও ভারতের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ নিয়ে তথ্য আদান প্রদানের একটি চুক্তিও রয়েছে। তবে এ বছর চীন কোনো তথ্য দেয়নি। চীন বলছে, দেশটির হাইড্রোলজিক্যাল স্টেশনগুলোর সংস্কার চলছিল বলে ভারতকে এধরনের তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। ভারত বিষয়টিকে সুনজরে দেখছে না। তবে বাংলাদেশ চীন থেকে অব্যাহতভাবে বন্যা সম্পর্কে আগাম তথ্য পেয়ে আসছে। ভারতের এ উদ্বেগও রয়েছে ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিতে পারে চীন। ভারত যেমন আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প নিয়েছে তেমনি চীন ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ব্যবহার করে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করার কথা ভাবছে। যা হবে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন