পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে রহিমা আক্তার সোনিয়া নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে সোনিয়ার মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয় রাজন এবং আতিককে অভিযুক্ত করে সোনিয়ার পরিবার থানায় ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ দিয়েছেন।
তবে বৃহষ্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত রাজন এবং আতিক। তবে তাদের উপযুক্ত বিচার চেয়ে সোচ্চার স্থানীয়রা।
পুলিশ ও সোনিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানায়, তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের কাজী শাহাবদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী রহিমা আক্তার সোনিয়া। সে তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের কালারামজোত গ্রামের পাথর শ্রমিক জাহেরুল ইসলামের মেয়ে। মঙ্গলবার সকালে প্রাইভেট কোচিংয়ে গিয়ে অর্ধেক রাস্তা থেকে ফিরে এসে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
সোনিয়ার স্বজনদের দাবি, তিন মাস আগে মায়ের চিকিৎসার জন্য ওষুধ দেয়ার কথা বলে সোনিয়াকে একটি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে রাজন ও আতিক। এদের মধ্যে রাজন তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওয়ার্ড বয় এবং আতিক একটি মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট। তারা কৌশলে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে রাখে। পরে ফেসবুক এবং অনলাইনে সেই ভিডিও ফুটেজ প্রচারের ভয় দেখিয়ে সোনিয়কে দফায় দফায় ব্ল্যাক মেইলিংয়ের মাধ্যমে ধর্ষণ করে।
আত্মহত্যার আগের দিন সোমবার সোনিয়া তার মা সেলিনা বেগম এবং মামা ফারুক হোসেনকে ধর্ষণ এবং ব্ল্যমেইলিংয়ের বিষয়টি জানায়। সোমবার রাতেই ফারুক হোসেন ধর্ষকদের সঙ্গে মাবাইল ফোনে কথা বলে দেখা করতে বলেন।
এদিকে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পরদিন মঙ্গলবার সকালে রাজন এবং আতিক আবারও সোনিয়াকে ভয় দেখান। অসহায় সোনিয়া আর যেতে পারেনি প্রাইভেট কোচিংয়ে। রাস্তা থেকেই বাড়ি ফিরে আত্মহত্যা করে সে।
তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, মেধাবী ছাত্রী সোনিয়া তাদের কাছ থেকে বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। আমরা এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। প্রয়োজনে আমরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করব।
সোনিয়া বাবা জাহিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে রাজন ও আতিকের নামে তেতুলিয়া থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ডের কথা বলে এই মামলাটি রেকর্ড করেনি। বলছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর ব্যবস্থা নেবেন।
তেঁতুলিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, পরিবারের কাছ থেকেই সোনিয়ার আত্মহত্যার খবর শুনে একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয়। অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাই। তাদের অভিযোগ পেয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন