ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে একের পর এক ভুয়া সংবাদ। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী নিয়ে প্রকাশ করা এসব ভুয়া সংবাদ দুই দেশের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণের পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন বলে মনে করেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা।
গত ৯ অক্টোবর ভারতীয় গণমাধ্যম ’সংবাদ প্রতিদিন’এ প্রকাশিত এক সংবাদে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ থেকে ২২ রোহিঙ্গা জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব জঙ্গিরা মিয়ানমারে হিন্দু গণহত্যায় জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা নিজেদের অসহায় শরণার্থী বলে পরিচয় দিয়েছিল। ধৃতদের মধ্যে হিন্দুদের গণহত্যার মূল পাণ্ডা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
‘বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হিন্দুদের গণহত্যায় জড়িত ২২ রোহিঙ্গা জঙ্গি’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদে কোনো সূত্রের উল্লেখ করা হয়নি। কারা এই ২২ জনকে গ্রেফতার করেছেন সে বিষয়েও বিস্তারিত কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
রোহিঙ্গা জঙ্গি গ্রেফতারের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ হেড-কোয়ার্টারে যোগাযোগ করা হলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশের অপর দুটি সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও মিলেনি এমন তথ্যের সত্যতা।
চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর নিউজ১৮ নামের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন তারই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আগস্টের ২৪ তারিখ ওই হত্যার পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য যুক্ত ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। তবে ওই সংবাদটিও ভুয়া ছিল বলে জানা যায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক বিজ্ঞপ্তির পর।
ওই সংবাদের পর প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ওপর গত ২৪ আগস্ট হামলার খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এর আগে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলে বাংলাদেশ ভারতের কলকাতাসহ সমগ্র আসাম ও ত্রিপুরার দখল নিবে’ বাংলাদেশের অনেক মানুষই এমন অলীক স্বপ্ন দেখছেন বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কলকাতা২৪x৭।
যুদ্ধের আবহে কলকাতা দখলের ‘স্বপ্ন’ দেখছে বাংলাদেশ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়, দেশের পশ্চিম প্রান্ত যখন পাক সেনা এবং জঙ্গিদের আক্রমণে উত্তপ্ত থাকবে, ঠিক সেই সময়েই কলকাতাসহ সমগ্র অাসাম এবং ত্রিপুরা দখল নেবে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের যুদ্ধের আবহে এমনই অলীক স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মানুষ। ওই সংবাদটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর এসব ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক ও ভুয়া সংবাদ দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।
তিনি সময় নিউজকে বলেন, যেকোনো নেতিবাচক সংবাদই সম্পর্ককে খারাপ করে। সেখানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর ধারাবাহিকভাবে এসব ভুয়া সংবাদ প্রকাশ বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়াও দেশটি সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারনার জন্ম দিবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে তবে তারা পাশের দেশটি সম্পর্কে কেমন মনোভাব পোষণ করছে তা বোঝা যায়। এ ধরনের নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত না করে ভারত সরকারের উচিত হবে এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।
ভারতীয় গণমাধ্যমের এসব ভুয়া সংবাদকে মানুষ যাতে বুঝতে পারে সেজন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে বলে মনে করেন প্রধান তথ্য কমিশনার ড. মো. গোলাম রহমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক সময় নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এজন্য ওই মহল এসব ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ভারতের যেসব সংবাদমাধ্যমে এই সংবাদগুলো প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো খুব একটা অথেনটিক সোর্স নয়। তার কোনো ক্রেডিবল সোর্স ব্যবহার না করেই এসব সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, এই অবস্থার থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এগুলোকে স্ট্রংলি প্রটেস্ট করতে হবে। তারা যেসব ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করছে সেগুলো যে সঠিক নয় তা মানুষকে জানাতে হবে। অন্যদিকে ভারতে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশনের উচিত হবে এসব সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তি যাতে ভবিষ্যতে ছড়াতে না পারে সেই পদক্ষেপ গ্রহণে ভারত সরকারকে অবহিত করা। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারে।
somoynews.tv
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন