মিয়ানমারের বুচিডংয়ের রাখাইন পল্লীর জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে টানানো হয়েছে লাল রঙের সাইন বোর্ড। এতে লেখা রয়েছে, 'এটি (মগ) বৌদ্ধদের আদি বাসস্থান। এখানে বাঙালি বসবাসের কোন অধিকার নেই।' এ ছাড়া মাইকিং করে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাখাইন রাজ্য না ছাড়লে তাদের (রোহিঙ্গা) করুণ পরিণতি হবে। এসব কথা বললেন পালিয়ে আসা নবী হোসেন মাস্টার।
বৃহস্পতিবার গর্জনদিয়া সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে আশ্রয় নিয়েছেন মরিচ্ছং গ্রামের (হুক্কাটা) চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত নবী হোসেন। তিনি সমকালকে আরও জানান, তার চলে আসার খবর পেয়ে তার ও আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ সপরিবারে বুচিডং ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তারা এপারে চলে আসতে পারে।
তার পালিয়ে আসার বর্ণনা দিতে গিয়ে মরিচ্ছং গ্রামের প্রভাবশালী এই ব্যক্তি বলেন, 'বর্মী সেনা ও সশস্ত্র রাখাইন যুবকেরা একেকটি গ্রাম ঘিরে ফাঁকা গুলি ছুড়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে; যাতে সবাই স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে যায়। স্বচ্ছল পরিবারে হানা দিয়ে টাকা-স্বর্ণালংকার লুট করছে। বাধা দিলে তরুণীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সহায় সম্পদ ফেলে এক কাপড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।'
নবী হোসেন মাস্টার আরও জানান, তার বয়োবৃদ্ধ পিতা অছিয়র রহমান (৭৫) ও মাতা সায়েরা বিবিসহ (৬৫) ১৭ জনের পরিবার। তার গরু-মহিষ ও মাছের খামার, ২শ' কানি জমির ধান, টাকাকড়ি ও স্বর্ণালংকাসহ মূল্যবান সব সামগ্রী রাখাইন যুবকরা লুট করেছে। পূর্বপরিচিত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকজন সদস্য তাকে আশ্বস্ত করেছিল, 'তোমাকে কেউ মারবে না। তবে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।'
ভোরে কুইয়ানচি বং, বাইলাখালী, সোজা পাড়া দিয়ে আসা ১০ হাজারে মতো রোহিঙ্গা এখন বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছে। বৃষ্টিতে জবুথবু বাকরুদ্ধ শিশুরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। অবশ্য স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী তাদের হাতে শুকনো খাবার তুলে দিয়েছে।
রাখাইনের সোজা পাড়া থেকে আসা রফিক উল্লাহ (২৫) সমকালকে জানান, সেখানে বেশকিছু পড়ালেখা করে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। মিয়ানমার সেনারা মর্টারশেল নিক্ষেপ সে মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। খোঁজ করছে শিক্ষকদের। এ অবস্থায় সহায়-সম্পদ ফেলে জীবন বাঁচাতে পাঁচ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিন দিন পাহাড়ি পথে হেঁটে এসেছেন। মাঝপথে অজপাড়া গাঁয়ের কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার খাবার দিলেও তার ছেলেমেয়েরা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন