১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) বিশ্ব ডিম দিবস। আর এই দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) প্রতিটি ডিম তিন টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিল। এমন ঘোষণায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে শুক্রবার সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন। ডিম কেনার জন্য ক্রেতারা লাইনে দাঁড়ান। লম্বা এই লাইন চলে যায় সংসদ এভিনিউ পর্যন্ত। তবে শেষ পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড় সামলাতে না পেরে ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেয় আয়োজকরা।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও লাঠিপেটা করে। ঘটনাস্থলে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।
মুহিবুল্লাহ মুহিব ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন টাকা পিস ডিম কিনতে দুই কি.মি. লম্বা লাইন! পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ! ভাবছি, ১০ টাকা দিয়ে ডিম কিনে খাবার সক্ষমতা কি আসলেই আছে আমাদের?’
শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘আচ্ছা, খামারবাড়িতে যদি একটা ডিম তিন টাকায় বিক্রি হয়, বাজারে কেন আট থেকে নয় টাকা? আমার তো মনে হয়, প্রতিটি ডিম পাঁচ টাকায় বাজারে বিক্রি হতে পারতো। যারা ডিম ব্যবসায়ী বা উৎপাদনকারী, তারা ভালো বলতে পারবেন। আরেকটি বিষয়, এই গরমে এত দীর্ঘ লাইনে এত যে মানুষ কষ্ট করছে, তাতে এটাই প্রমাণ হয়-এই শহরের মানুষের জীবন ভয়াবহ সংগ্রামের। দুটো টাকা বাঁচাতে তাদের ভয়াবহ সংগ্রাম করতে হয়।এর নাম জীবন, এই শহরে।’
রাস্তায় ডিম ভেঙে একাকার (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)মাসউদুর রহমান রানা লিখেছেন, ‘বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা এই ডিম যুদ্ধের কথা মনে রাখবে...ডিম নিয়ে যুদ্ধটা যে এই প্রথম।’
মুজতবা খন্দকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আন্ডা কিনতে গিয়ে ডান্ডার বাড়ি!’
লিংকন মোহাম্মদ লুৎফরজামান সরকার লিখেছেন, ‘আজ ডিম নিতে লাঠির বাড়ি খেয়ে, বিক্ষোভ করেও ডিম পায়নি ঢাকাবাসী! এ কেমন বিচার!খবরের লিংক কমেন্টে! খবরটা পড়ে হাসতে হাসতে মুর্ছা গেছিলাম, একটু আগে জ্ঞান ফিরল।’
ইয়াসির ওবায়েদ জিকো লিখেছেন, ‘প্রথমে প্রতিটি থানায় ডিম সরবরাহ করা হোক। পরবর্তীতে থানা থেকে ডিম বিতরণ করা হোক।’
ইমদাদুল হক তুহিন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘উপচে পড়া ভিড় বললে ভুল হবে,তিন টাকায় ডিম কিনতে রীতিমত যেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে।’
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন, ‘৩০,০০০ ডিম... হালি তিন টাকা দরে বিক্রি হবে...!!!, আর যায় কোথায়... লাখো মানুষ বালতি, ঝুড়ি নিয়ে হাজির... বিষয়টা এমন নয় যে, খুব গরিব লোকজন গিয়েছিল... রীতিমত গাড়িওয়ালারা পর্যন্ত!!! ফলাফল... ডিম বিতরণ পণ্ড... প্রথমত আয়োজকদের এই ঘোষণাটিই ছিল সমস্যা। কী করে ভাবলেন এই চড়া বাজার মূল্যের সময়ে ৩০,০০০ ডিম নির্বিঘ্নে বিক্রি করা সম্ভব? আর সস্তায় ডিম কিনতে সামর্থ্যবানেরও ছুটে যেতে হবে? ’
সৈয়দ খলিলুর রহমান পোস্ট, ‘ঠিক কতটা আর্থিক অনটনে থাকলে; মানুষ তিন টাকার ডিমের জন্য এমন লঙ্কাকাণ্ড ঘটায়? মধ্যম আয়ের দেশ।’
এদিকে তিন টাকায় ডিম বিক্রির ঘোষণা দিয়ে ক্রেতাদের হাতে ডিম তুলে দিতে না পারলেও কার্যক্রম সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। সংগঠনের সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘এটাকে ব্যর্থতা বলবো না, আমরা সফল।আমরা যে রকম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তার চেয়েও অনেক বেশি মানুষের সাড়া পেয়েছি। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য ডিম বিক্রি করা যায়নি। এজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন