বিশ্ব ডিম দিবসে স্বল্প মূল্যে ডিম বিক্রির ঘোষণায় বলা হয়েছিল ১২ টাকা হালিতে প্রত্যেকে ৯০টি করে ডিম কিনতে পারবে। কিন্তু ভোর থেকে লাইনে অপেক্ষায় থেকে যখন মাত্র ১০টি ডিম পাওয়ার ঘোষণা শুনতে পেলেন তখনই উত্তেজনা আর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মূলত একই সঙ্গে ডিমের এতো বেশি ক্রেতার সংখ্যা দেখে ভড়কে যান আয়োজকরা। ক্রেতার চাপ সামলাতে কর্তৃপক্ষ পুলিশের সহায়তা নেয়। শেষ পর্যন্ত তা মুহূর্তেই ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষে রূপ নেয়।
শুক্রবার ছুটির দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টা এই পরিস্থিতি বিরাজ করে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে। সেখানে আয়োজন করা হয়েছিল ডিম মেলার।
এসময় ডিম না পেয়ে ‘আর কোনো দাবি নাই, ডিম চাই বিচার চাই’, ‘ডিম চোর, ডিম চোর’, ‘ডিম চাই ডিম চাই’, ‘ভুয়া ভুয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডিম কিনতে আসা সাধারণ মানুষ।
বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিটি ডিম ৩ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। প্রতিজন ৯০টি করে ডিম ক্রয় করতে পারবেন বলেও জানিয়েছিল আয়োজকরা।
এই ঘোষণায় শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর খামাবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিক্রি শুরু করলেও অতিরিক্ত মানুষের চাপে ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেন আয়োজকরা। তারা জানান, এক লাখ ডিম বিক্রির জন্য আনা হয়েছিল। মাত্র আধা ঘণ্টায় ৮০ হাজার ডিম বিক্রি হয়ে যায়।
ডিম নিতে আসা ইন্দিরা রোডের ব্র্যাক কর্মকর্তা সুশীল দেবনাথ পরিবর্তন ডটকমকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা চাকরিজীবীরা সস্তায় ডিম পাবো বলে এসেছিলাম। এমন হবে ভাবিনি। দুই তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ১০টা ডিম নেওয়ার কোনো মানে নাই। তাই চলে যাচ্ছি।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা সাইফুল আলম শোভন বলেন, উদ্যোগটি ভালো ছিল। কিন্তু এ অবস্থা হবে ভাবিনি। আরও গোছানো হতে পারতো। তাছাড়া এখানে যারা এসেছেন বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত। বোঝা যায় তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কতটা চাপে আছেন।
তিনি বলেন, ডিম নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না। মানুষ ডিম যে খুব পছন্দ করে তাও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু আয়োজকরা খুব দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। ডিম বিক্রির জন্য একাধিক বুথ রাখা দরকার ছিল। কিন্তু তারা একটা মাত্র বুথ রাখায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে।
এবিষয়ে বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি যেমন ছিল, তার থেকে অনেক বেশি ভিড় হয়েছে। পুলিশ এবং আমাদের ভলান্টিয়ারি সার্ভিস ঠিক ছিল। তবে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য আমরা দুঃখিত।’
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘এক লাখ ডিম আমাদের হাতে ছিল। আমরা জানি না কত ডিম বিতরণ হয়েছে। আমরা এটা ব্যর্থতা মনে করি না, এটা আমাদের সফলতা। পরিস্থিতির কারণে আমরা ডিম বিক্রি বন্ধ করেছি। এটাতে প্রমাণ হয় জনগণ সাড়া দিয়েছে।’
মসিউর রহমান আরো জানান, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ডিম বিক্রি করার। কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের পাশাপাশি মানুষের হুড়োহুড়িতে বেশ কিছু ডিম ভেঙে যায়।’
তিনি বলেন, ‘ডিম কিনতে যত মানুষ এসেছে আমাদের ততটা প্রস্তুটি ছিল না। তাই প্রাথমিকভাবে ডিম বিক্রি বন্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এমন সুলভমূল্যে ডিম বিক্রি করা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন