বৈশ্বিক ক্ষুধা সুচকে ভারতের স্থান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এমনকি প্রতিবেশি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও নেপালের নিচে অবস্থান করছে ভারত। ১১৯টি দেশের মধ্যে ভারত ১০০-তে অবস্থান করছে! ব্রিকসভুক্ত (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) দেশগুলোর মধ্যে ভারতের স্থান সর্বনিম্ন।
১১৯টি দেশের মধ্যে জরিপ চালিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের (গ্লোবাল হাংগার ইনডেক্স বা জিএইচআই) ওই ফল প্রকাশ করেছে।
২০১৪ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ৭৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ৫৫। ২০১৬ সালে ১১৮টি দেশের মধ্যে ভারত ৯৭তম স্থানে চলে যায়। বর্তমানে তা আরও বেড়ে ১০০-তে পৌঁছেছে। ভারতের জন্যই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থান নিচের সারিতে হয়েছে।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচক তৈরিতে শিশুদের অপুষ্টি, শিশুর উচ্চতার তুলনায় কম ওজন, বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা ও শিশুমৃত্যুর হারকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির ক্ষুধা সমস্যা বর্তমানে মারাত্মক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ায় ক্ষুধা সূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে দেশটির অবস্থান তৃতীয়।
বিশ্ব সংস্থার ওই রিপোর্টে চীন ২৯, নেপাল ৭২, মিয়ানমার ৭৭, শ্রীলঙ্কা ৮৪ এবং বাংলাদেশ ৮৮তম স্থানে রয়েছে। এর আগে গত বছর তালিকার ৯০তম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ ভারত এ সকল প্রতিবেশি দেশের চেয়ে নিচে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে ভারতের একটাই সান্তনা। তা হল- পাকিস্তানের অবস্থা ভারতের চেয়েও বেহাল। তাদের অবস্থান ১০৬-এ। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের অবস্থান আরও এক ধাপ নিচে ১০৭-এ দাঁড়িয়েছে।
ওই রিপোর্টে প্রকাশ, এ দেশের পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুদের প্রতি পাঁচ জনের এক জনের ওজন উচ্চতা সাপেক্ষে অত্যন্ত কম। প্রতি তিনজনের একজন বয়স অনুপাতে খর্বকায়।
রিপোর্ট প্রস্তুতকারক সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান পি কে যোশীর মতে, সার্বিক পুষ্টির লক্ষ্যে দেশে যত বড় মাপের প্রকল্পই চালু করা হোক, খরা ও পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্য গরিবদের একটা বিরাট অংশের মধ্যে অনাহারজনিত অপুষ্টির ঝুঁকি রয়েছে।
এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তৎপরতা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন।
ভারতে বিরোধীরা এতদিন বলে আসছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ‘আচ্ছে দিন’ (সুদিন) ইত্যাদির কথা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হলেও তা আসলে নেহাত ফাঁকাবুলি। সরকার অবশ্য বিরোধীদের ওই দাবিকে পত্রপাঠ নাকচ করে দিলেও এবার আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে ভারতের বেহাল দশার কথা ফুটে উঠতেই বিরোধীদের অভিযোগের যথার্থতা আরও জোরালো হলো বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ভারতের শাসক দলের জন্য যা চরম উদ্বেগজনক বিষয়। কারণ সামনেই রয়েছে কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন থাকায় বিরোধীদের সমালোচনার মুখ বন্ধ করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পরে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন