স্বামীর মৃত্যুর জন্য পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করেছে মিল্টনের স্ত্রী মাজেদা বেগম। তার দাবি সন্ত্রাসী প্রথমে এসে এলাকা ঘেরাও করে। বাসায় এসে হামলা চালায়। তখন ফোন দিয়েছি কিন্তু পুলিশ কথা শোনে না। মাইরা শেষ করছে তারপর আসছে। মেরে ফেলার পর তাদের আসার সময় হয়ছে। পুলিশের গাফিলতির কারণে আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি। এর আগেও আমি থানায় গিয়ে জিডি করিয়ে আসছি। এখনো পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। চার-পাঁচদিন হয়ে গেলে আমার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলছে। আমার সন্তানদের এতিম করে দিলো। পুলিশ দারোগা কেউ আমাদের বিপদের বন্ধু না।
বৃহস্পতিবার রাতে ফতুল্লার কাশীপুরে হোসাইনী নগর এলাকাতে একটি রিকশার গ্যারেজে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন তুহিন হাওলাদার মিল্টন ও তার সহযোগী পারভেজ আহমেদ নামের দুই যুবক। ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্যের সঙ্গে স্থানীয়দের বক্তব্যও এক। এলাকাবাসীও বলছে, তাদের ধারণা ঘটনাটি পুরোটাই পরিকল্পিত। হত্যার উদ্দেশ্যেই ঘাতকেরা এসেছিল। সে কারণেই ঘটনার আগে চেহারা আড়াল করতে সেখানকার বৈদ্যুতিক বাতিগুলো ভেঙে ফেলে পরে অন্ধকারের মধ্যে হামলা করে ঘাতকেরা।
এদিকে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। দুপুরে সরেজমিনের ফতুল্লার কাশিপুর হোসাইনী নগর এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকার প্রায় কয়েক শতাধিক দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও রিকশার গ্যারেজটির সামনে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে।
মিল্টনের স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা ওর কাছে (স্বামী মিল্টন) চাঁদা চাইতো। চাঁদা দেয় নাই বলেই ওর সাথে শত্রুতা, মেরেই ফেলেছে। চার-পাঁচদিন আগের ঘটনা। সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করছে। পরে ঘরে এসে সব কিছু ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। আমার স্বামী বাধা দিতে গেছে ওই সময় এক ছেলের হাতে কোপ লাগে। তার দুই থেকে ৪দিন পর এসে এখানে মারলো। বাপ্পী রবিনদের একটি সন্ত্রাসী দল আছে। এসবগুলোই মারছে। এর আগে হুমকি দিয়েছিল ওরা। ওরা অনেক টাকা নিছে। আরো চাইছিল দেয় নাই তাই মেরে ফেলছে। ওইদিন রাতে বাপ্পী, রবিন, সুমিত, আমান, রকি, ফয়সাল সহ কয়েকজন মিলে হত্যা করেছে।’
মিল্টনের ছোট ভাই মো. মিজান রহমানের স্ত্রী হাসনা হেনা বেগম বলেন, ‘সমিতির অফিস ছিল তাই সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করতো। চাঁদা না দেওয়ায় কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসীরা বাসায় এসে ভাঙচুর করে বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায়। যার জন্য থানায় মামলাও করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বড় বড় রাম দা, চাকু নিয়ে ১ থেকে ২শ মানুষ এসে বাড়ি ঘেরাও দেয়। পরে বাসায় না পেয়ে রিকশার গ্যারেজে গিয়ে হত্যা করে।
পারভেজের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কাজে জড়িত ছিল না। ও কর্মচারী ছিল। কিন্তু আমার ছেলেকে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, তা জানতে চাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় প্রথম প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা মিল্টন যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সেখানে হামলা করে। ওই বাড়িতে না পেয়ে পরে তারা গ্যারেজে আসে। সেখানে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই গ্যারেজে হানা দেয়। ওই সময়ে এলাকাতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে সেখানে থাকা মিল্টন ও পারভেজকে কুপিয়ে জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। তখন গ্যারেজে আগুন ও হোসিয়ারী কারখানা ভাঙচুর করে।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সশস্ত্র হামলাকারীরা কুপিয়ে তুহিন হাওলাদার মিল্টন (৪০) ও পারভেজ আহমেদ (৩৫) নামে হত্যা করে। পরে ওই রাতে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, আমাদের ধারণা হয়তো সমিতির টাকা নিয়ে কোনো বিরোধ থাকতে পারে। আর এটা পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুনের উদ্দেশ্য নিয়েই হামলাটি হয়েছিল।
নিহত তুহিন হাওলাদার মিল্টন নাটোর জেলার বরদাসপুর এলাকার শাহেব আলীর ছেলে। বিগত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে তিন কন্যা সন্তান ও স্ত্রী সহ পরিবারের কাশিপুর হোসাইনী নগর বসবাস করছেন। ছায়াবৃত্ত শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে সমিতির পরিচালক ছিলেন তিনি ও নিহত পারভেজ আহমেদ ম্যানেজার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন