শক্রবার রাত ৮টা। অবসর সময় কাটাতে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেলদুয়ার চরপাড়া মাস্টার বাজারে চায়ের দোকানে আড্ডা চলছিল। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই নজর কাড়ল জনতা ভিড়। চায়ের কাপ হাতে নিয়েই এগিয়ে গেলাম। দেখলাম, ১৭/১৮ বছরের এক তরুণী বসে আছে। কেউ হাসছে, কেউ হাসাচ্ছে। কেউ ভাবছে। কেউ ভাবিয়ে তুলছে। তরুণীর নাম জিজ্ঞেস করলে বললেন, বাড়িতে যামু। আবার বলে বাবা নাই, মা নাই যামু কনে? এই হাসি। এই নীরব। আবার বলল, সবাইরে কইয়া দিমু। কোনভাবেই পরিচয় নিতে পারলাম না।
ইচ্ছে করেই কাগজ আর কলম নাড়াচাড়া করলাম। কাগজ-কলম হাত থেকে নিয়ে লিখলেন মরিয়ম। ভেবে নিলাম মেয়েটির নাম হয়তো মরিয়ম। কিন্ত উপস্থিত সবাই মিলেও এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে পারলাম না। রাস্তায় এই বয়সের মেয়েটি একা থাকবে কীভাবে? এরকম মেয়েকে আশ্রয়ই বা কে দেবে?
যেহেতু পরিচয় পাওয়া গেল না, সেহেতু ওই অসহায় বিপদগ্রস্ত তরুণীর ফটোসেশন করে নিলাম। হয়তো তার ছবিটি প্রকাশ হলে স্বজনরা কেউ নিয়ে যেতে পারে। ফটোসেশনের পরে জানা গেল- আরো কিছু তথ্য। গত দুই-তিন দিন ধরে নাল্লাপাড়া গজিয়াবাড়ী এসব এলাকায় রয়েছে মেয়েটি। রাতে কোথায় ছিল, কিভাবে ছিল কেউ বলতে পারছে না। তবে তাকে শারীরিক আঘাত করা হয়েছে, হাঁটতে পারছে না দেখেই বোঝা যাচ্ছে। স্থানীয়রা সাক্ষীও দিল নাল্লাপাড়া মোড়ে তাকে পেটানো হয়েছে। হালকা কিছু গহনা ছিল সেটাও কেড়ে নিয়েছে কেউ।
দুই তিন দিন ওর ওপর যাই হয়ে থাক আজ তাকে একটি আশ্রয় দেয়া দরকার। কে নেবে ওর দায়িত্ব। সবাই এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। কেউ কেউ ঝামেলা পছন্দ করছে না। আবার প্রশাসনের ঝামেলা এড়াতে মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে চাচ্ছে না।
উপস্থিতিরা মনে করছেন সাংবাদিক এলেই সমস্যা সমাধান হয়। ভাই একটা কিছু করেন। ওরাতো জানে না সাংবাদিকের করারই বা কতোটুকু আছে? নিরুপায় হয়ে মুঠোফোনে কথা হল দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন কবিরের সাথে। তিনি নাটোর থেকে গাড়িযোগে দেলদুয়ার ফিরছেন। বললেন, দেখি কি করা যায়। কয়েক মিনিটের ভেতরে এই কর্মকর্তাও বেশ কয়েকজনকে ভাবিয়ে তুলেছেন।
একটু পরেই কলব্যাকে বললেন, আমি দেলদুয়ার থাকলে চলে যেতাম পরিদর্শনে। বিষয়টি নিয়ে দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনসহ, সমাজসেবা অধিদপ্তর টাঙ্গাইলে ডিডির সাথে কথা বলেছেন। শনিবার সকালে একটি ব্যবস্থারও নিশ্চয়তা দিলেন এই কর্মকর্তা।
রাতের দায়িত্ব কে নেবেন? জানা গেল, চরপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ আবুল মিয়া বিকালে অজ্ঞাত মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ির নারীদের দিয়ে গোসল, খাওয়া-দাওয়া করিয়েছেন। সবাই সিদ্ধান্ত দিলেন, আবুল মিয়াই রাতে থাকার দায়িত্ব নেবেন। তিনিও রাজিও হলেন।
মো. হযরত দেওয়ানের দোকানেই বসা অবস্থায় ছবিটা তোলা হলো। সাথে ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, আবুল মিয়াসহ অনেকেই।
উপস্থিতিরা অনেকেই জুস, কলা রুটি খাওয়াচ্ছে মেয়েটিকে। সবার ধারণা, ফটোসেশনের ছবিটিই প্রকাশ হলেই স্বজনরা মেয়েটিকে নিতে আসতে পারে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন