ফরিদপুরের নগরকান্দায় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর গাড়িবহরে হামলার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তারা দায়ী করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়াকে। তারা বলছেন, জামাল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিল। সূত্রগুলোর দাবি, ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী একটি পেট্রোল পাম্প থেকে জামাল হোসেন সংসদ উপনেতার গাড়িবহর লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়েন।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে নগরকান্দার তালমা মোড়ে সাজেদা চৌধুরীর গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় সংসদ উপনেতা ও তার প্রটোকলে থাকা নগরকান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এস এম মহিউদ্দিনের গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। তবে এ ঘটনায় তাদের কোনও ক্ষতি হয়নি।
ঘটনার সময় সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরী। এই হামলার জন্য সরাসরিই জামাল হোসেন ও তার সমর্থকদের দায়ী করেন আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মা আজ দু’দিনের সরকারি সফরে নিজ নির্বাচনি এলাকা নগরকান্দায় আসছিলেন। সঙ্গে আমিও ছিলাম। পথে জামাল হোসেন ও তার সমর্থকরা আমাদের গাড়ি বহরে হামলা চালায়। জামাল হোসেন নগরকান্দায় বিভিন্ন ধরনের মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতে এবং স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী।’
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে তিনি তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।
সাজেদা চৌধুরীর গাড়ি বহরে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আরিফ হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় তালমা মোড়ের একটি পেট্রোল পাম্প থেকে জামাল হোসেনকে আমি গুলি ছুড়তে দেখেছি।’ তিনিও দাবি করেন, ‘জামাল হোসেন উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী।’
ঘটনার পর পরই নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এফ এম নাসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি নিজেও হামলার শিকার হয়েছি। জামাল হোসেন ও তার সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রায় ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে সংসদ উপনেতা নিরাপদে তার গ্রামের বাড়ি রসুলপুরে যান।’
এদিকে, হামলার কথা অস্বীকার করে ঢাকায় থাকার দাবি করেন জামাল হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি কয়েকদিন ধরে ঢাকায় আছি। শুনেছি, দুপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তখন সংসদ উপনেতার গাড়িবহর ওইদিক দিয়ে যাচ্ছিল। ওই সংঘর্ষের মধ্যে পড়েই তিনি হামলার শিকার হন।’
জানা গেছে, জামাল হোসেন মিয়া নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবু শহিদ মিয়ার ছেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামাল হোসেন সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পড়ার সময় জামাল ছাত্রলীগ করতেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তিনি সৈয়েদা সাজেদা চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) নিযুক্ত হন। প্রায় তিন বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। পরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাকে এই দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়।
সূত্রগুলো বলছে, সাজেদা চৌধুরীর পিএ থাকার সময় চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন জামাল। বর্তমানে জামাল নিজেকে প্রোপার্টিজ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করতেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন