বৃদ্ধ এক মাকে রাস্তায় ফেলে এবার পালিয়েছে তার পালিত কন্যা হেলেনা খাতুন। সেই কষ্ট, দুঃখ আর যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চাইলেন বৃদ্ধ মা আয়শা খাতুন (৮৫)।
বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের রিকশাপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী নাজমা আক্তার জানান, সন্ধ্যার অন্ধকারে হঠাৎ করেই গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের পুকুরে পানির শব্দ পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি, একজন বৃদ্ধা পড়ে গেছে। উঠাতে চাইলাম, তিনি উঠতে চায়নি।
বৃদ্ধা বললেন, ‘মরতেই ঝাঁপ দিয়েছি।’
উদ্ধারের পর আয়শা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার ছেলেমেয়ে কেউ নেই, স্বামী আবুল হোসেনও মারা গেছে। ছোট সময় থেকেই হেলেনা আক্তার নামের একটি কন্যাকে তিনি বড় করেন। সেই মেয়ে আজ রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে।
তিনি বলেন, মেয়েও মরাতে চেয়েছিল, আমার মরণ নাই, তাই মরি না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আয়শা আক্তার আরও বলেন, আমার পালিত মেয়ে এখন ঢাকায় থাকেন, সেখানে আলিশান বাড়ি, কোটিপতি ওরা। আমার কোমর অচল, একটি পা চলে না, অসুস্থ, রোগা। আমাকে ওরা রিকশাপট্টির রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছে। এখন কোথায় যাব।
নাজমা আক্তার ও এলাকাবাসী ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা পরিষদের সামনে নিয়ে আসেন।
এরপর রিকশায় করে আয়শা আক্তার তার পরিচিত ও আত্মীয়স্বজনের কয়েকটি বাড়িতে যান। কিন্তু তারা কোনো দায়িত্ব নিতে চায়নি। পরে রিকশাচালক প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘুরে আয়শাকে আবারও উপজেলা পরিষদের সামনে রেখে চলে যায়।
রিকশাচালক আবদুল মালেক যুগান্তরকে বলেন, যেখানেই যাই, সেখান থেকেই তাড়িয়ে দেয়।
পরে হামাগুড়ি দিয়ে ওই বৃদ্ধা হাজির হয় যুগান্তর স্বজন সমাবেশের কার্যালয়ে। হাউমাউ করে কাঁদে আর বলতে থাকে, মরলেই বাঁচতাম।
অবশেষে গৌরীপুর মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর প্রতিনিধির অনুরোধে উপজেলা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম চিকিৎসাধীন সময়টুকুর জন্য হাসপাতালে নিতে রাজি হন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন