নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ হলো। এতে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল বা সহায়ক সরকারের নামে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে-বিপক্ষে, ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে, সীমনা পুনঃনির্ধারণের পক্ষে-বিপক্ষে মিলে প্রায় ৬শ প্রস্তাব দিয়েছে দলগুলো। এর মধ্যে অনেক প্রস্তাবনা রয়েছে যা অনেকের সঙ্গে মিলে গেছে।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ হওয়া প্রসঙ্গে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৪০টি দলের সঙ্গেই সুচারু ও সফলভাবে সংলাপ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা বেশ সফলভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছি। সবাই খুব আন্তরিক ছিলেন, আমরাও সহায়তা পেয়েছি।
অবশ্য ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা জানিয়েছেন, সংলাপ শেষে সবার প্রস্তাব একীভূত করে আমরা বই আকারে প্রকাশ করব। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলে এগুলো পাঠাব। তাছাড়া আমাদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বসব। যেসব বিষয় আমাদের এখতিয়ারে নেই সেগুলোর বিষয়ে সরকারের কাছে প্রয়োজনে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
ইসিতে উপস্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইসিতে ১১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। এগুলো হলো- আরপিও-১৯৭২ ও দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউশন অর্ডিনেন্স-১৯৭৬ এর বাংলা ভাষান্তরের উদ্যোগ প্রশংসনীয়, এতে আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে। এক্ষেত্রে আরপিও এর ৯৪/এ ধারা অনুসরণযোগ্য; নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার রোধকল্পে সংবিধানে বর্ণিত নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা ও বিদ্যমান নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ; এ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মে ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার অপেশাদার ও দায়িত্বহীন আচরণের কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া; বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পরিবর্তে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং ও সহকারী অফিসার পদে নিয়োগ; নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের বাছাই করে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের একটি চূড়ান্ত প্যানেল প্রণয়ন করতে প্রয়োজনে আরপিওর প্রয়োজনীয় সংশোধন; দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা। বিশেষ দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যশীল ব্যক্তি বা সংস্থাকে দায়িত্ব না দেওয়া; সাংবাদিকদের নির্বাচনী বিধিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দেয়া।
সেইসঙ্গে তাদের উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান ও দায়িত্বকর্ম এলাকা নির্ধারণ করে দেয়া; প্রার্থীদের নিয়োজিত পোলিং এজেন্টদের তালিকা ছবিসহ নির্বাচনের ৩ দিন আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রদান করা এবং প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক এজেন্টদের পরিচয় নিশ্চিত করে কেন্দ্রে প্রবেশ ও ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেন্দ্রে থাকা নিশ্চিত করা; সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান বিধিবিধানের পাশাপাশি আধুনিক রাষ্ট্রসমূহের মতো ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা; পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আইনশৃংখলার দায়িত্ব দেয়া। এ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইনশৃংখলা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবকে আইন ও সাংবিধানিক নিয়মের সাংঘর্ষিক। আইনশৃংখলার ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়োগ করা যাবে তা ফৌজদারি কার্যবিধি ও সেনা বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে বলে দাবি দলটির; এছাড়া নতুন আদমশুমারী ব্যতীত সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে অভিমত দেয় দলটি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
দলটির ২০ দফা লিখিত প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনাগুলো হলো- বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থার করা; ১/১১ এর আমলে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, গুম-খুন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশ তথা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কার্যকর সংলাপের উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার করা যাবে না, সব দলের জন্য এখন থেকে সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরি করতে হবে, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের অন্তত সাত দিন আগে থেকে মোতায়েন করতে হবে, সিইসি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না, পুরো ইসি বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে; ২০০৮ সালের পূর্বে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসনসমূহের সীমানা পুনর্বহাল করতে হবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)
দলটির ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিশোধের রাজনীতির পরিবর্তে সমঝোতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে; সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে বাৎসরিক আর্থিক সহযোগিতা (থোক বরাদ্দ) দিতে কমিশনকে উদ্যোগ নেয়া; নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অভিন্ন পোস্টার ও মঞ্চের ব্যবস্থা করা এবং ভোটারসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট)
ইভিএমে আপত্তি, বিদায়ী সিইসিকে নিয়ে ইসি পুনর্গঠনের জাতীয় পরিষদ গঠন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার অন্যতম। দলটি পাঁচ দফা সুপারিশ করে।
বাংলাদেশ মুসলীম লীগ (বিএমএল)
সংসদ ভেঙে তত্ত্বাধায়ক বা সহায়ক সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা সুপারিশ।
খেলাফত মজলিশ
সহায়ক সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, নিবন্ধন শর্ত শিথিল, নির্বাচনী ব্যয় চারগুণ বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ২৪ দফা সুপারিশ।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
ইভিএমের বিপক্ষে, না ভোটের পক্ষে, সমঝোতার ভিত্তিতে তদারক সরকার, ভোটার অনুপাতে সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ২৩ দফা সুপারিশ করেছে দলটি।
জাতীয় গণতান্ত্রি পার্টি (জাগপা)
নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, সংসদ ভেঙে ভোট, ইভিএম বাতিল, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনসহ ১৪ দফা সুপারিশ দিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট
সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে রাখা ও নির্বাচনী বিতর্কের ব্যবস্থা রাখা, দলের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা বাতিলসহ ১০ দফা সুপারিশ করে দলটি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন সরকার, ইভিএমের বিপক্ষে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে ইসিকে আইনের আওতায় আনাসহ ১৫ দফা দাবি জানায় দলটি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ
সেনা মোতায়েন, ধর্মবিরোধী কোনো দলকে নিবন্ধন না দেওয়া, ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন না করা, একই পোস্টারে সব প্রার্থীর পরিচয় ও প্রতীক, একই মঞ্চে প্রার্থীদের বিতর্ক আয়োজনসহ ১৫ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করে দলটি।
ইসলামী ঐক্যজোট
জাতীয় নির্বাচনে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় মোতায়েন, অভিন্ন পোস্টারসহ ১১টি প্রস্তাব তুলে ধরে ইসলামী ঐক্যজোট।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
সেনাবাহিনী মোতায়েন, সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা ও কোনো জোটের প্রার্থীদের শরীক দলের যেকোনো প্রতীকে নির্বাচন করাসহ ৮ দফা সুপারিশ করে দলটি।
ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ
সংসদে ভেঙে ভোট, ইভিএম ও না ভোট চালু, তিন ধাপে ৩শ আসনে ভোট, সব নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশনের বহন, তফসিল ঘোষণার পর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করাসহ ১২ দফা সুপারিশ।
ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন
জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিপক্ষে মত দিয়েছে দলটি। সেইসঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নিবন্ধন বাতিল, ভোটার সংখ্যা অনুপাতে সীমানা পুননির্ধারণসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরে দলটি।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি
বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন, না ভোট, প্রতি বিভাগের জন্য একদিন করে ভোট আয়োজনসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরে দলটি।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চলমান সংসদ বিলুপ্ত করা ও বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ ২১ দফা প্রস্তাব পেশ করে বাংলাদেশ ন্যাপ।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)
বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙে ভোট, ‘না’ ভোট চালুসহ ১৬ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে পিডিপি। প্রধানমন্ত্রীকে ঐচ্ছিক ছুটি দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নির্বাহী প্রধান করে অপরাপর কমিশনার এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয় দলটি।
গণফ্রন্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরাকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন; নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, ইভিএম চালু, ধর্মবিরোধী দলের নিবন্ধন বাতিল, সংসদীয় আসন বাড়ানো; বর্তমান সরকারকে সংবিধান সংশোধন করে হলেও (তত্ত্বাবধায়ক নয়, অরাজনৈতিক সরকার নয়) একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন; স্বাধীনতার পরে যে সকল নিবন্ধিত দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল তাদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠনসহ ১২টি প্রস্তাব দেয় দলটি।
গণফোরাম
জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতসহ ২২ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে গণফোরাম। দলটি সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ‘মানি পাওয়ার’ ও ‘মাসল পাওয়ার’- এই দুটিকে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বিধান বাতিল; তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুর্নবহাল, সেনাবাহিনী নিয়োগ ও নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিসহ ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে দলটি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)
ভোটের সময় দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন; ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার ও সেনা মোতায়েন না করাসহ ১২টি সুপারিশ দিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ
ভোটের আগে সংসদ বিলুপ্ত; বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, নিবন্ধিত প্রত্যেকটি দলের একজন প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ২৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে দলটি।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
তত্ত্বাধায়ক পুনর্বহাল, সেনাবাহিনী মোতায়েন, দলের কমিটিতে নারী রাখার বিধান বাতিল এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের নির্বাচনে অযোগ্য করাসহ ৩৮টি সুপারিশ করে ইসলামী দলটি।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)
পাঁচ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ভোটের ১০ দিন আগে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন ও প্রশাসনে রদবদল করা; রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা নিয়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা; প্রবাসীদের ভোটদানের ব্যবস্থা করা; ইসির আস্থা অর্জন করা এবং হলফনামার পাশপাশি অঙ্গীকার নামা জমা নেয়া।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে চায় তরিকত। ইভিএম পদ্ধতি চালু, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েনসহ ১২ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে দলটি।
জাকের পার্টি
জাতীয় ঐক্য তৈরি; ইভিএম ব্যবহার; ইসির বাজেট বাড়ানোসহ ২৭ দফা প্রস্তাবনা দেয় জাকের পার্টি।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
দলটির ১৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সংসদ ভেঙে দেয়া; আগামীতে জাতীয় সংসদে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ১০০ জন নারী সংসদ সদস্য রাখার বিধান করা; নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববর্তী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য আইন করা; নির্বাচনের সময় শুধু রুটিন কাজ করার জন্য নিরপেক্ষ সরকার; নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আলাদা আইন করা; নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা বাজেট দেয়া; নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা; পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা ও নির্বাচনী বিরোধ মেটানোর জন্য স্বতন্ত্র ও আলাদা আদালত গঠন ইত্যাদি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)
সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন সরকার; সেনা মোতায়েন; না ভোটসহ ১৪ দফা প্রস্তাব দেয় জেএসডি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)
নতুন করে আদমশুমারী প্রতিবেদন না হওয়ায় বর্তমান আসন সীমানায় পরবর্তী ভোট চায় জাসদ। নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর কেউ যেন বিএনপি বা অন্য দলের হয়ে ভোটে অংশ নিতে না পারে, দলের অনুদান আয়করমুক্ত করা, হলফনামার বিধান বাতিলসহ ১৭টি সুপারিশ তুলে ধরে দলটি।
জাতীয় পার্টি
বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলের প্রতিনিধিদের দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন; সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন; ভোটারের ভিত্তিতে সীমানা পুননির্ধারণসহ ৮ দফা প্রস্তাব রাখে জাপা।
বিকল্পধারা বাংলাদেশ
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতবিরোধ নিরসনে সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠন; সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করা; বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনা মোতায়েন; না ভোট চালুসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে বিকল্পধারা।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি
বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন; ইভিএম ব্যবহার এবং ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করাসহ ১৪টি প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি
বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন; স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনা মোতায়েন; সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট এবং নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন বরাদ্দ; ‘না’ ভোট চালুসহ ১৬ দফা সুপারিশ করে দলটি।
গণতন্ত্রী পার্টি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন; ধর্মভিত্তিক দলের নিবন্ধন বাতিলসহ ২১ দফা সুপারিশ করেছে গণতন্ত্রী পার্টি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
সংসদ ভেঙে নির্বাচন; ভোট অনুযায়ী সংসদে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ ব্যবস্থা চালু; সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করাসহ ১৭ দফা সুপারিশ করেছে দলটি।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন; ইভিএম চালুসহ ১৮ দফা প্রস্তাব দেয় দলটি।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় সংসদ বিলুপ্তির কোনো প্রয়োজন নেই; নতুন আদমশুমারী প্রতিবেদন না থাকায় বিদ্যমান সংসদীয় আসনেই একাদশ সংসদের ভোট গ্রহণ; নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই; মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও জামায়াতের প্রতিনিধিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও যাতে ভোট করতে না পারে সে বিধান করা; ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে লালন ও পৃষ্টপোষকতা করে এমন দলের নিবন্ধন বাতিল করা; ইভিএম চালু; ইসির নিজস্ব জনবল নিয়োগ; স্বাধীন ইসি গঠন; প্রবাসীদের ভোটাধিকার; না ভোট চালু; প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার বন্ধ; অনলাইনে মনোনয়ন ও নিবন্ধিত দলকে রাষ্ট্রীয় অনুদানসহ ১৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
জাতীয় পার্টি (জেপি)
কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়ে লিখিত কোনো প্রস্তাবনা দেয়নি। তবে কমিশন চাইলে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে পারে; ইভিএম ব্যবহার না করা; বর্তমান সংবিধানের আলোকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় করেছে দলটি।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া; ভোটের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে সেনা মোতায়েন; সংসদীয় আসনের বিদ্যমান সীমানা বহাল রাখা; বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার সুপারিশসহ ইভিএম চালুর বিষয়ে সবার ঐক্যমত নেওয়াসহ ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই থেকে সংলাপ শুরু হয়ে আগামী ২৪ অক্টোবর শেষ হবে। গণমাধ্যম প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়েছে। এরপর ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে সংলাপ পর্ব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন