ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উপদেষ্টা কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে যোগ দিতে দুই দিনের ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আগামী ২৩ অক্টোবর ঢাকায় কমিশনের চতুর্থ বৈঠক বসবে। বর্তমানে চলতে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের ওই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও একথা মানতে রাজি নয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটা স্বাভাবিক যে, এ ধরনের কোনো বৈঠক যখন অনুষ্ঠিত হয়, তখন আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও চলতি সমস্যার একটা ছাপ আলোচনায় থাকে। তবে তা কখনো প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের সেপ্টম্বরে উভয় প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের আলোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করার জন্য এই যৌথ উপদেষ্টা কমিশনটি গঠিত হয়েছিল। কমিশনের চতুর্থ বৈঠকেও আলোচনা হবে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে থাকা সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে। বিশেষ করে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তিগুলো সম্পাদিত হয়েছিল তার হাল-হকিকত নিয়েই প্রধানত আলোচনা হবে জেসিসির বৈঠকে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ৩৬টি চুক্তি, যা একটি রেকর্ড। ওই সময়ই ভারত বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ হিসাবে দেবার কথা ঘোষণা করেছিল। ওই ঋণ সংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গেছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে, ঢাকায় ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলির উপস্থিতিতে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সূত্রটির ভাষ্য অনুযায়ী, ‘গত এপ্রিল মাসে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলির মধ্যে অন্তত ৯টি চুক্তি ছিল বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেল সংক্রান্ত। বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে ওই চুক্তিগুলো হয়েছিল। জেসিসি বৈঠকে আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে শক্তি বা জ্বালানি ক্ষেত্রে সম্পাদিত চুক্তিগুলির হাল-হকিকত।’
এক প্রশ্নের উত্তরে শীর্ষ সূত্রটি জানান, ‘কমিশনের বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ গুরুত্ব পাবে এই অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি এবং সেই আলোচনাতেই প্রাসঙ্গিকভাবে উঠবে রোহিঙ্গা ইস্যু। কেননা ভারত সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের স্থিতি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। যদিও ভারত বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ চাইছে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ভারত আরো বেশি কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করুক।’
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে যাই বলা হোক না কেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে মিলিত হবেন আর সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় গুরুত্ব পাবে না, এটা অসম্ভব। তবে সেই আলোচনার বিবরণ বা সিদ্ধান্ত বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে উহ্য থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় উন্নয়নের বিষয়ে যে কাঠামোগত সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তারই অন্তর্গত জেসিসি গঠিত হয়। জেসিসির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের মে মাসে দিল্লিতে। দ্বিতীয় বৈঠক হয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তৃতীয় বৈঠক হয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর জেসিসি’র বৈঠক হবার কথা থাকলেও ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বৈঠক হয়নি। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কমিশনের যুগ্ম-চেয়ারম্যান। আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন