গত বৃহস্পতিবার সিপিডি আয়োজিত ‘বন্যা ২০১৭: ক্ষয়ক্ষতি ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক সংলাপে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ যা বলেছেন, তাতে বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আশকারা পাবেন। সংলাপে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজে ভবিষ্যতে যাতে হরিলুট না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে বলেন।
বাঁধ নির্মাণ বা মেরামতে হরিলুট হয়েছে, সে কথা কিন্তু আইনুন নিশাত বলেননি। তিনি বলেছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধের নির্মাণ ও মেরামতের কাজ দুর্বল হলে বন্যার পানিতে সহজেই ভেসে যায়। এর জবাবে মন্ত্রী মহোদয় বললেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দুর্নীতি করলেও হরিলুট করেন না, লুটপাট করতে পারেন।’ লুটপাট ও হরিলুট শব্দের মধ্যে অর্থগত ফারাক একেবারে উপেক্ষণীয় নয়। হরিলুট হলো সংকীর্তনের পর ভক্তদের মধ্যে বাতাসা বিলানো। আর লুটপাট হলো অন্যের সম্পদ জোর করে হাতিয়ে নেওয়া বা দখল করা। জনগণের সম্পদ যদি পাউবির কর্মকর্তারা লুট করেন, সেটি কি মন্ত্রীর চোখে দোষণীয় নয়?
হাওরে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে প্রতিবছর কী হয়, সেটি মন্ত্রী না জানলেও দেশবাসী ভালো জানেন। মন্ত্রী লুটপাটের পক্ষে সাফাই না গেয়ে এসব অভিযোগ আমলে নিলে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও উপকৃত হতো। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সময়মতো বাঁধ মেরামতের কাজ করা হয় না। অনেক ঠিকাদার ও কর্মকর্তা মনে মনে প্রার্থনা করেন, বৃষ্টি ছাড়া মৌসুমটা কোনোমতে পার হয়ে যাক।
এবার আগাম বৃষ্টি ও বন্যা আসায় হাওরের ফসল ভেসে গেছে এবং সংশ্লিষ্টদের অপকর্ম হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এ কথা কেউ অস্বীকার করছেন না যে এবার বেশ বৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কথা হলো বাঁধগুলো যথাসময়ে নির্মাণ ও মেরামত করা গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা কমানো যেত। সংলাপটি ছিল ক্ষয়ক্ষতি উত্তরণের উপায় নিয়ে। মন্ত্রী মহোদয় সেদিকে নজর না দিয়ে কেন পাউবোর অসাধু কর্মকর্তাদের পক্ষ নিলেন, তা বোধগম্য নয়।
আশা করি, তিনি ভবিষ্যতে এভাবে অসাধু কর্মকর্তাদের পক্ষে সাফাই না গেয়ে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ যাতে ঠিকমতো হয়, সেই চেষ্টা করবেন। বাঁধ ভাঙার জন্য ইঁদুর ও ফুলের গাছকে না দুষে পাউবোর অসাধু কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি বাড়াবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন