নগরীর ফটিকছড়ির হেয়াকোঁ বনানী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক রহমানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। কোহিনুর আক্তার (২৮) নামের জনৈক মহিলার সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় হাতনাতে ধরা পরার পর গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন ওই শিক্ষক। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে তিনি নিজেই ব্রেকিংনিউজকে জানান।
গত বৃহস্পতিবার রাত ২টায় তাঁর নিজ এলাকা রামগড়ে এ ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশ পায় শনিবার।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ওসি ব্রেকিংনিউজকে জানান, কোহিনুর নামে এক মহিলাসহ প্রিন্সিপালকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদেরের মধ্যস্থতায় ওই প্রিন্সিপাল ছাড়া পান বলে কাউন্সিলর দেলোয়ারের কাছ থেকে শুনেছি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পরকীয়ার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রামগড় বল্টুরাম টিলার নিজের রাইচমিলে যান ফারুক। রাইচ মিলের একটি ঘরে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন পরকীয়া প্রেমিকা কোহিনুর। এ ঘরে প্রায় সময়ই কোহিনুরসহ অন্য নারীদের নিয়ে আপত্তিকর পরিবেশ তৈরি করতেন ওই শিক্ষক।
ওই দিন রাতে কোহিনুরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হওয়ার এক পর্যায়ে ঘটনা আঁচ করতে পেরে পৌর কাউন্সিলর দেলোয়ারসহ স্থানীয়রা সেখানে হানা দেন। এসময় ফারুক কোহিনুরের সঙ্গে রসালাপে মত্ত ছিলেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে তিনি এলোমেলো কথাবার্তা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত লোকজন তাকে উত্তম মধ্যম দেয়া শুরু করে।
অবস্থা বেগতিক দেখে ফারুক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাদেরকে ফোন করে তাকে উদ্ধারের আকুতি জানান। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাদের, সাবেক চেয়ারম্যান মুজিব, বনানী কলেজের প্রফেসর শ্যামল রুদ্রসহ স্থানীয়দের সঙ্গে আপস বৈঠক করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা ও স্টাম্পে মুচলেখা দিয়ে ছাড়া পান ফারুক। একই ঘরে উক্ত নারীর সঙ্গে এক বছর আগেও আটক হয়েছিলেন এই কলেজ শিক্ষক।
এ ব্যাপারে প্রফেসর শ্যামল রুদ্র ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে ঘটনাটি শোনার পর অধ্যক্ষ ফারুককে ফোন দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।’
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাদের বলেন, ‘আগে লোকজন কেন তাকে আটক করেছে জানিনা, তবে ফারুক জানিয়েছেন রাইচ মিলের জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান। তবে ঘটনার সময় কোহিনুরের স্বামী কবির অদূরেই ছিলেন বলে জানান ভাইস চেয়ারম্যান।
এব্যাপারে কাউন্সিলর দেলোয়ার বলেন, ‘কোহিনুরের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয়দের সহায়তায় ফারুককে আটক করা হয়।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তি অধ্যক্ষ ফারুক রহমানের সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘এটা তার বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ। রাতে অটোচালকের মাধ্যমে রাইচমিলে আগুন লাগার খবরে সেখানে যাওয়ার পর কিছু লোক আমাকে জোরপূর্বক ঘরে নিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।’
তবে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জানিয়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে এ ঘটনার পর বনানী কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ছাত্রলীগের বনানী কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, আগামীকাল পুনরায় বৈঠকের পর কলেজ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
দাঁতমারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মজিবুল হক মজুমদার বলেন, ‘কলেজ একটি পবিত্র শিক্ষাঙ্গন। এখানে সবার মেয়েরা পড়ালেখা করে। একজন কলেজপ্রধান যখন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন তখন তার ওই পদে থাকার কোনও অধিকার থাকে না।’ তিনি বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরার অনুরোধ জানান।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন