স্বাধীনতার পর এবার প্রথমবারের মতো মৌলভীবাজাররের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর ব্রিজের পাশের বালু মহাল ইজারা দিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক। ইজারা পাওয়ার পর নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে উত্তোলন করে বালু। ব্রিজের এক কিলোমিটার আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করার নিয়ম না থাকলেও মানছে না এসব ইজারাদার। এতে হুমকির মূখে পড়েছে পাশের একটি নদীর বাঁধ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ৩০ কোটি টাকার একটি ব্রিজ। বালু উত্তোলনের পর থেকে ফাটল দেখা দেয় পাশের বাঁধে এবং কোটি টাকার ব্রিজের এক পাশের মাটি বিলীন হওয়া শুরু হয়।
এ স্থানের বালু ইজারা বন্ধ করতে স্থানীয় এলাকাবাসী মানবন্ধনসহ নানা মহলে যোগাযোগ করা হলেও কাজ হয়নি। বাঁধ মেরামত করতে ২২ লক্ষ টাকা দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সে বরাদ্দ থেকে রীতিমত হরিলুট হয়। এমনকি জেলা প্রশাসকের মাসিক সভায় জনপ্রতিনিধিরা চাতলাপুরে ব্রিজের বালু ইজারা বন্ধ করতে গত তিন মাস থেকে একাধিকভার উত্তাপন করা হলেও টনক নড়েনি জেলা প্রশাসকের। বহালতবিয়তে বালু উত্তোলনকারীরা।
সবশেষ ২২ অক্টোবর ভোরে বাঁধ ভেঙ্গে যায় সে স্থানের। নিমিসেই প্লাবিত হয় ২০-২৫টি গ্রাম। হাজার হাজার হেক্টোবর কৃষি জমি তলিয়ে যায় পানিতে। রাস্তা-ঘাটে মানুষের হাহাকার শুরু হয়। সাংবাদিকদের দেখলেই গ্রামবাসী বলছে “দয়া করে আমাদের জন্য কিছু করেন ভাই”। ভাঙনের এই আর্তচিৎকার শুনবেন কি জেলা প্রশাসক সেটাই দেখার বিষয়।
ভাঙন কবলিত মানুষের আর্তনাদ শোনা যায় চাতলাপুর এলাকায়। এ আর্তনাদ ধনী-গরীব সবার। তাদের আর্তনাদ শোনার যেন কেউ নেই।
একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে অন্যদিকে সরকারের ৩০ কোটি টাকার ব্রিজ পড়েছে হুমকির মুখে। তাছাড়া বাঁধ দেওয়ার নামে বরাদ্দ হলে হরিলুট হয় নিত্যদিন।
স্থানীয়রা জানান, কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না বালু মহাল ইজারাদাররা। সরকারের কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা। যেমন খুশি তেমন বালু উত্তোলন করছে তারা।
শরিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: জুনাব আলী জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোরনের কারেণ আজ হাজার হাজার মানুষ পানিতে প্লাবিত। ব্রিজের পাশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমার জনগণ এর থেকে মুক্তি চায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ চক্রবর্তী সদ্য যোগদান করেছেন জানিয়ে বলেন, সবকিছু গুছায়ে উঠতে পারেননি। তবে তার কার্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তারা মনু ও ধলাই নদের সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারী করছেন।
এ ব্যাপারে রোডসেন হাইওয়ের নির্বাহী পরিচালন মিন্টু রঞ্জন দেব নাথ ৩০ কোটি টাকার ব্রিজটি হুমকির মুখে জানিয়ে বলেন, কিছু দিন আগে বস্তাবর্তী বালু দিয়ে একটি পাশ মেরামত করা হয়েছে। যোদি বালু উত্তোলনের কারণে হয় তাইলে আমাদের আওতার মধ্যে সেটা নেই।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী পূর্বপশ্চিমকে জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন যেন না হয় সেজন্য ঊর্ধ্বতন মহলে রিপোর্ট করেছি। আগামীতে যাতে এ অঞ্চলের বালু মহাল ইজারা দেওয়া না হয় সে ব্যবস্থাও করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তুফায়েল ইসলাম জানান, যোদি অবৈধভাবে বালু উঠানোর কারণে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়, তাহলে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে। দরকার হলে ইউএনওকে দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন