দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক কোনও ব্যক্তিকে নোটিশ দেয়ার পর তা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, দুদকের অনুসন্ধানের কাজ এক্সপ্রেস গতিতে নয়, কচ্ছপ গতিতে চলে।
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতি অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেয়া চিঠি নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিকালে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এ সময় দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ২০১০ সালের ঘটনা তখনই সুপ্রিম কোর্টের কাছে তথ্য চাইতে পারতেন। কিন্তু তা না করে ৭ বছর পর কেন দুদক তথ্য চাইলো।
এ সময় দুদকের তথ্য ফরমে থাকা চারটা ক্লোজ (৬, ৭, ১১, ১২) নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেন, এটা কতটা বাস্তবসম্মত? একজন মানুষের দৈনন্দিন বাজারের তালিকাও কি লিখে রাখা সম্ভব?
উল্লেখ্য, ওই ক্লোজগুলোতে হিসাব দাতার প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সন্তানের লেখা পড়ার যাবতীয় হিসাবের তথ্য দিতে হয়।
এদিকে মঙ্গলবার রুলের শুনানিতে দুজন অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকটে প্রবীর নিয়োগী ও সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর দুইটা সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান, বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান তরফদার।
পরে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের নিয়োগ দেয়া তিনজন অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আজ তারিখ ধার্য ছিল। এর মধ্যে দুজন অ্যামিকাস কিউরি তাদের বক্তব্য দিয়েছেন।’
এর মধ্যে প্রবীর নিয়োগী তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতি অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যে চিঠি দিয়েছে তা আইনবহির্ভূত। সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের কোনও চিঠি দিতে পারে না।’
খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘আদালত তার কাছে জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের চিঠির বিষয়ে হাইকোর্টের শোনার এখতেয়ার আছে কিনা। তখন প্রবীর নিয়োগী বলেছেন, হ্যা, এটার শোনার এখতিয়ার এ আদালতের আছে।’
এ মতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে ঠিক একই বক্তব্য দিয়েছেন আরেকজন অ্যামিকাস কিউরি এ এম আমিন উদ্দিন। ওনিও বলেছেন, ‘এটা জুডিশিয়াল অর্ডার না। এটা একটা অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ (প্রশাসনিক) আদেশ। এটা দেয়ার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই।’ এটি নিয়ে শুনানি করার এখতিয়ার হাইকোর্টের আছে বলেও মত দেন তিনি।
এ ছাড়া একজন সিটিং বিচারপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা যাবে কি যাবে না সে বিষয়েও আদালতে তারা বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের প্রাক্তন বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করে আদালত।
এরপর গত ১৯ অক্টোবর রুলের ওপর প্রথম শুনানি হয়। আজ দ্বিতীয় দফায় শুনানি শেষ হয়।
গত ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠিটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান তফাদার।
এরপর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে ওই চিঠি কেন অবেধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
রুলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল, দুদক চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দশ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন