মুদ্রা পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা পৃথক পাঁচ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম, আজাদ আহমেদ ও গুলজার আহমেদের জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় আগে থেকেই কারাগারে রয়েছেন দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ। মূলত বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ঘটে যাওয়া ওই ধর্ষণের ঘটনার পরই সামনে আসে আপন জুয়েলার্সের নাম। ওই ধর্ষণ মামলা ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতির মামলার কারণে বর্তমানে বাপ-ছেলে দুজনকেই জেল খাটতে হচ্ছে।
আলোচিত ওই ধর্ষণ মামলা চাপা দিতে বিপুল অর্থ খরচের চেষ্টার অভিযোগ উঠলে অর্থের উৎস ডার্টি মানি কি না অথবা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অস্বচ্ছ কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তখনই আপন জুয়েলার্সের একের পর এক দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। এরপরই মামলা দায়ের হতে থাকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে মুদ্রা পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা পৃথক পাঁচ মামলায় জামিন আবেদন করেন আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক দিলদার, আজাদ ও গুলজার।
এ সময় দিলদার আহমেদকে উত্তরা পূর্ব, রমনা ও ধানমন্ডি থানার শুল্ক আইনে দায়ের করা মামলায় মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন ও দেবব্রত বিশ্বাস জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
অন্যদিকে গুলশান থানার দুই মামলায় দিলদার আহমেদের ভাই আজাদ আহমেদ ও গুলজার আহমেদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর হাকিম আহসান হাবিব।
তার আগে রোববার ও সোমবার আপন জুয়েলার্সের মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা করেন ধর্ষণের শিকার হওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।
মামলার আসামিরা হলেন— অাপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এক পরিচিত ব্যক্তির জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন তারা। বনানীর রেইনট্রি হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে রেখে তাদের ধর্ষণ করা হয়।
মামলা হওয়ার পর এর প্রধান আসামি ছেলে সাফাতের পক্ষে দিলদার সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার পর ফেইসবুকে তার বিরুদ্ধে সরব হন অনেকেই।
দেশের শীর্ষস্থানীয় অলঙ্কার ব্র্যান্ডের মালিকের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ। আন্দোলনের মুখে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সাফাত ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।
ওই মাসের শেষ দিকে আপনের বিভিন্ন বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ১৫ দশমিক ৩ মণ সোনা এবং ৭ হাজার ৩৬৯টি হীরার অলঙ্কার জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
শুল্ক ফাঁকি রোধে দায়িত্বরত এ সংস্থার ভাষ্য, মজুদ ওই গয়নার কোনো বৈধ কাগজপত্র আপন কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি।
অনুসন্ধান শেষে গত ১২ আগস্ট দিলদার ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীর গুলশান, ধানমণ্ডি, রমনা ও উত্তরা থানায় পাঁচটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন