২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরলেন সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক ও নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নিয়ে তারা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। এই দুই নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে আবদুল মোবারক ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার। সিইসি ছুটিতে থাকলে তিনি ‘ভারপ্রাপ্ত’ সিইসি’র দায়িত্বও পালন করতেন। তাদের অধীনে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ইসি সূত্র জানায়, সব দল সংলাপে অংশ নেওয়ার আবদুল মোবারক আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংলাপে এ পর্যন্ত যে আলোচনা হয়েছে, তাতে সকল দল অংশ নিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! এটা একটা খুশির কথা। অতীতে নির্বাচন বয়কট করার বিষয়টা, ১৯২০ সনে ভারত বর্ষের প্রথম নির্বাচনে মহাত্মা গান্ধী বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হতে পারেননি। সেই নির্বাচনে ১৮৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে অনেকেই উদ্দেশ্যপূর্ব, অচিন্তপূর্ব, অভূতপূর্ব-এই সমস্ত কথা বলেন। তারা ইতিহাস জানেন না। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তো আমেরিকায় দুইবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর অন্য প্রেসিডেন্টও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এরকম উদাহরণ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেটা সম্পর্কে যতো কথাই বলুন না কেন, সারাদেশে ১০০ জন লোকও চার বছরে ওই নির্বাচনের বিরুদ্ধে কোনো মিছিল বা মানববন্ধন করেন নাই। চার বছর পার হয়ে গেছে, আরেকটা বছর কোনো রকম পার করতে পারলেই এটা পূর্ণ হয়ে যাবে। অতএব এটা জনগণ কর্তৃক গৃহীত। কতিপয় লোকজন এটা নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা বলে থাকেন, তারা তাদের বিদ্যা জাহির করতে চান। সে রকম কিছু মানুষ তো থাকবেই। কথার ভিন্নতা থাকেই।
কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তার কর্ম সম্পাদনকালে যদি কখনো প্রয়োজন মনে করে আমার সেবা দরকার, আমি প্রস্তুত থাকবো, আমাকে ডাকলেই পাওয়া যাবে।
রকিব কমিশনের আরেক সদস্য মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, আমাদের সময়ে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা আমরা আর চাই না। আমাদের সময় আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। আবার দেশের অনেক বড় দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে নির্বাচন করেছি আমরা। ওই সময়ের সঙ্গে এখনকার সময় মেলানো যাবে না। এখন সময় অনেক ভালো। আমি মনে করি, সবার অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। এখন আমাদের নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপ আয়োজনের বিষয়টি বর্তমান কমিশনের জন্য ইতিবাচক হয়েছে বলেও জানান সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার।
৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। এরপর গত ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ২২ অক্টোবর নির্বাচন পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারীনেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। মূলত এর মধ্য দিয়েই শেষ হলো ইসির প্রায় আড়াই মাসের ধারাবাহিক সংলাপ।
নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, মো. শাহ নেওয়াজ; সাবেক সচিবদের মধ্যে আবদুল করিম, মনজুর হোসেন, হুমায়ুন কবীরসহ সাবেক স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ ও মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন