ফরিদপুরের নগরকান্দায় মঙ্গলবার ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ক্লাস বন্ধ রেখে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে শোভাযাত্রা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাতীয় স্যানিটেশন মাস উপলক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি নগরকান্দা পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে উপজেলা চত্বরে ফিরে আসে। শোভাযাত্রায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান, উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী আকবর মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।
ওই শোভাযাত্রায় উপজেলা সদরে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকরামুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের (এসএমএ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের) দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ক্লাস বন্ধ রেখে রোদের মধ্যে বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রা করায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন অভিভাবক অভিযোগ করেন, শোভাযাত্রায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত থাকার কথা বলা হলেও শুধু শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়।
এসএমএ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে সাড়ে পাঁচ শ। প্রতিদিন সকাল সোয়া ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়। আজ ওই শোভাযাত্রায় বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত দেড় শ শিক্ষার্থীকে পাঠানো হয়। তারা এক ঘণ্টা পর ফিরে এলেও ওই শিক্ষার্থীদের দুটি ক্লাস নষ্ট হওয়ার কথা।
এসএমএ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব আলী মিয়া বলেন, ‘উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মোবাইল ফোনে আমার কাছে শোভাযাত্রা করার জন্য ১৫০ জন শিক্ষার্থী চেয়েছিলেন। এ জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠানো হয়েছিল। তারা বেলা ১১টার দিকে অংশ নিতে গেছে এবং দুপুর ১২টার মধ্যে স্কুলে ফিরে এসেছে।’ তিনি দাবি করেন, এ জন্য তাদের দুটি নয়, একটি ক্লাস নষ্ট হয়েছে। ক্লাসের সময় কমিয়ে বাকি ক্লাসগুলো নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী আকবর মোল্লা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সহজে পাওয়া যায়। তাই তাদের এনে শোভাযাত্রার কাজটা সেরেছি। আমি প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ মোর্তুজা আহসান বলেন, ‘ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের এনে শোভাযাত্রা করানো ঠিক হয়নি। শোভাযাত্রা সাধারণত নয়টার দিকে হয়। ১১–১২টার দিকে এ জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া সঠিক হয়নি। তবে কীভাবে বা কোন প্রক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে, তা আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, ‘বিষয়টি আগে থেকে আমার জানা ছিল না। তবে আমি শোভাযাত্রা করার সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেখেছি। যারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁরা হয়তো ক্লাস চলছে—এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা আর না ঘটে, সেদিকে নজর রাখা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন