রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চারশ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে সব আগ্নেয়াস্ত্রের হদিস পাওয়ার দাবি করছে দুদক। মঙ্গলবার দুদক রংপুর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান।
শামসুল ইসলাম নামের এই কর্মচারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জুডিশিয়াল মুন্সিখানা (জেএম) শাখার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর।
সংবাদ সম্মেলনে আতিকুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে লাইসেন্স গ্রহীতাদের মধ্যে ২৬২ জনই অবসরপ্রাপ্ত সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য। ১৪ জন নিজেদের ভুয়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য পরিচয়ে এবং ভুল নাম-ঠিকানা দেখিয়ে লাইসেন্স নেন।
“ঢাকার বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমতও শটগানের লাইসেন্স নিয়েছেন শামসুলের কাছ থেকে।”
আতিকুর আরও বলেন, শামসুল ইসলাম জেএম শাখায় ২০০৩ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের ৬ জুলাই এবং ২০১১ সালের ১৭ মে থেকে চলতি বছরের ১৭ মে পর্যন্ত অফিস সহকারী পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় রংপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের স্বাক্ষর জাল করে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছিলেন।
“দুদফায় আটদিন রিমান্ডে থাকাকালে শামসুল ইসলাম চারশ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এরমধ্যে সবগুলোরই হদিস পাওয়া গেছে। শামসুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যারা লাইসেন্স নিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেককে গত ২ অগাস্ট থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স গ্রহীতারা পর্যায়ক্রমে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ দুদক কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে সেগুলো জব্দ করা হয়।”
এর মধ্যে ৩১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং তিন হাজার ৫৩০টি কার্তুজ রয়েছে বলে জানান এই দুদক কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে দুদক রংপুরের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদারসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ১৭ মে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে শামসুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে তার কক্ষের আলমারীর তালা ভেঙ্গে সেখান থেকে নগদ ৭ লাখ ১০০ টাকা, তার নামে ১১ লাখ টাকার দুটি এফডিআরের নথিপত্র এবং দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র উদ্ধার করেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ইস্যু করা ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের ‘অবৈধ লাইসেন্সও’ জব্দ করেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা অমূল্য চন্দ্র রায় বাদী হয়ে ১৮ মে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছে দুদক।
পরেরদিন জেলা প্রশাসক শামসুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর থেকে পলাতক ছিলেন শামসুল। তার বাড়ি রংপুর নগরীর খোর্দ্দ তামপাট এলাকায়। গত ৫ জুলাই রাতে ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে শামসুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন