২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় বেড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। রেলের হিসাব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির আয় এ সময় আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি ও নতুন তিনটি ট্রেন সার্ভিস চালু করার কারণেই এ পরিমাণ আয় বাড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেন সার্ভিস বাড়ানো গেলে প্রতিষ্ঠানটির আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
সংস্থাটির হিসাব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে রেলের মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৯০৪ কোটি ১ লাখ টাকা। অর্থাত্ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ রেলওয়ের আয় বেড়েছে ৩৯৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা ৪৪ দশমিক ২২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে তিনটি নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর পাশাপাশি কোচ আমদানির মাধ্যমে সেবার পরিসর বাড়ানোয় প্রতিষ্ঠানটির আয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের নতুন নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর পাশাপাশি প্রায় সব ধরনের ট্রেনে কোচের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে টিকেটিং ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের ফলে যাত্রীরাও টিকিট সংগ্রহে উত্সাহিত হয়েছে। গত অর্থবছরে রেলের বেশ কয়েকটি বৃহত্ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়েছে। ফলে এ সময় রেলের আয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গেছে। সেবাপরিধি বাড়ানোর চলমান প্রক্রিয়া ধরে রাখা গেলে রেলের আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য কমে আসবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত রেলের গত অর্থবছরের বার্ষিক আয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময় প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে যাত্রী খাতে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেলের যাত্রী খাতে আয় ছিল ৫৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বেড়ে গত অর্থবছর তা দাঁড়ায় ৭১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায়। এছাড়া পণ্য পরিবহন খাতের আয় ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকায়। বিবিধ খাতের আয় ২০১৫-১৬ অর্থবছর ছিল ১৩০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সেখান থেকে গত অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকায়। এ সময় পার্সেল খাতে আয় ২ কোটি ২৯ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকায়।
রেল কর্মকর্তারা জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০০টি মিটার গেজ কোচ এবং ভারত থেকে ১২০টি ব্রডগেজ কোচ আমদানির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর রেলের বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে নতুন করে কোচ সংযোজন শুরু হয়। এছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু করা হয়। জনপ্রিয় আন্তঃনগর ট্রেনে নতুন কোচ সংযোজনের পর পুরনো কোচগুলো অন্যান্য ট্রেনে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনের বেশকিছু কোচ ওয়ার্কশপে মেরামত ও টাইপ পরিবর্তন করে দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনে সংযোজন করা হয়। তিনটি নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর পাশাপাশি কোচের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আয় বেড়েছে রেলের যাত্রী খাতে।
দেখা গেছে, গত অর্থবছরে রেলের আয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চলতি বছরের জুনে। অর্থবছরের শেষ মাসে পুরনো বকেয়া সংগ্রহ হওয়ায় মাসভিত্তিক আয়ের ক্ষেত্রে জুনই সর্বাগ্রে রয়েছে। এ সময় সংস্থাটির মোট আয় হয়েছে ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় সবচেয়ে কম হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। এ সময় রেলের মোট আয় ছিল ৬৯ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
রেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি কোচ ও ইঞ্জিন সরবরাহ আরো বাড়ানো গেলে রেল এখনই একটি লাভজনক সংস্থা হয়ে উঠতে পারত। চাহিদা থাকলেও কোনো অজ্ঞাত কারণে গত এক দশকে রেলের কোচ ও ইঞ্জিন আমদানির প্রকল্পগুলো শ্লথ হয়ে পড়েছে। শুধু অপর্যাপ্ত কোচ ও ইঞ্জিন আমদানির কারণে চাহিদা অনুযায়ী যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত অর্থবছরে মাত্র ২২০টি কোচ আমদানিতেই রেলের আয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে। সবগুলো ট্রেনে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোচ ও চাহিদামাফিক ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করা গেলে আয় দ্রুত বাড়ানো সম্ভব।
অঞ্চলভিত্তিক আয়ের হিসাবে দেখা যায়, গত অর্থবছরে পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় পূর্বাঞ্চল বেশ এগিয়ে ছিল। তথ্যমতে, গত অর্থবছরে পূর্বাঞ্চল রেলের আয় হয়েছে ৮৩৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে যাত্রী খাতের আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা; যাত্রী ছাড়া (পার্সেল) আয় ১১ কোটি ৭৮ লাখ, পণ্য পরিবহনে ১১৯ কোটি ৬০ লাখ ও বিবিধ খাতে আয় হয়েছে ২২৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। একই সময় পশ্চিমাঞ্চল রেলে মোট আয় হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে যাত্রী খাতে ২৩৭ কোটি ২৩ লাখ, পার্সেল আয় ৭ কোটি ৩৫ লাখ, পণ্য পরিবহনে ১৪৪ কোটি ৫৩ লাখ ও বিবিধ খাতে ৭৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। রেলসংশ্লিষ্টরা জানান, সেবাপরিধি বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডির মাধ্যমে কনটেইনার, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য পরিবহনের সুযোগ বেশি থাকায় পূর্বাঞ্চল রেলের আয় তুলনামূলক বেশি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন