ড. লিয়াকত আলী খান্। দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় আছেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জে জমি কিনেছেন। জমির নামজারিও হয়েছে। কিন্তু সেটি ঠিকঠাক হয়েছে কি না সেটি তিনি যাচাই করতে পারেননি। সেই সদূর কানাডা থেকে ঢাকায় এসে কাজটি করাও দুরূহ বটে। সময় ও অর্থ খরচের বিষয়টি তো আছেই। এ নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন তিনি।
কানাডা প্রবাসীর সেই চিন্তা কাল এক নিমিষেই হারিয়ে গেল। মাত্র কয়েক মিনিটে সুদূর কানাডা থেকে তিনি তার জমির নামজারির তথ্য জানতে পেরেছেন মুঠোফোনের মাধ্যমে। এতে বেজায় খুশি লিয়াকত আলী খান।
ভূমিসংক্রান্ত এই তথ্যসেবা দিচ্ছে কেরানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের ভূমি কার্যালয়। ওই রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিব হাসানের উদ্যোগ আর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সেখান থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
গত সোমবার চালু হওয়ার পর দুই দিনে দেশ-বিদেশ থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তি ফোন করে এই সেবা নিয়েছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে জমির মালিকেরা ০১৯৩৩৪৪৪০৫৫ নম্বরে ফোন করে জমিসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য জানতে পারবেন।
দুবাই থেকে কাল এই সেবা গ্রহণ করেন লিটন নামের এক প্রবাসী। তিনি কেরানীগঞ্জে জমি কিনবেন। সেই জমির দাগ-খতিয়ান ঠিক আছে কি না সেটি তিনি মুঠোফোনে যাচাই করেন। এভাবে প্রবাস থেকে অনেক ফোন এসেছে এই মুঠোফোনে।
আর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন তো আসছেই। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিব হাসান জানান, মুঠোফোন সেবা চালুর দুই দিনে দুই শতাধিক ফোন পেয়েছেন তারা। তিনি নিজে ৭০ থেকে ৮০ জনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে ভূমিসংক্রান্ত নানা সমস্যা সমাধান করেছেন।
রাকিব হাসান বলেন, ‘মানুষের কাছে খুব সহজে আমরা সেবা পৌঁছাতে চাই। যাতে কোনো ধরনের সময়ের অপচয় এবং হয়রানি ছাড়াই একজন সেবাগ্রহীতা সেবা পেতে পারেন। সেই জন্যই আমরা মুঠোফোন সেবা চালু করেছি।’
দুই দিনেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে সহকারী কমিশনার বলেন, ‘দেশে-বিদেশে অনেক মানুষ আমাদের ফোন করে ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো তাদের চাহিদা পূরণ করেছি। অনেকেই ফোন করে এই সেবার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। এটি যেন চলমান থাকে সেজন্য অনেকে অনুরোধও করেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই এসি ল্যান্ড বলেন, ‘আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং এডিসি (রেভিনিউ) স্যারদের অনুপ্রেরণা এবং পরিকল্পনায় আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। স্যারদের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা কাজ করছি। আমরা চাই মানুষের দোরগোরায় এই সেবা পৌঁছে দিতে।
ভূমি অফিস নিয়ে দেশে অভিযোগের অন্ত নেই। সেখানে কোনো ভূমিসংক্রান্ত কোনো যাওয়া মানেই মানুষ মনে করত নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি অর্থ আদায়, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য, কাগজপত্রের জালিয়াতি, দীর্ঘসূত্রতা— এসব বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের আশঙ্কা। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ভূমি কার্যালয় এ থেকে অনেকটা মুক্তি দিল গ্রাহকদের।
ভূমি অফিস সূত্র জানায়, রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার এই সেবা দেওয়া হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুঠোফোনটি খোলা থাকবে। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন এ ফোন বন্ধ থাকবে। অভিযোগ, ভূমির তথ্য এখানে লিখে রাখা হবে। জানানো হবে মালিকদের।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ এলাকার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার ভূমি অফিসের ওই নম্বরে ফোন করে একটি জমির দাগ নম্বর জানতে চান। মুঠোফোন থেকে তাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই এ তথ্য জানানো হয়। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এটা করাতে অর্থ ও সময় দুই-ই বাঁচবে। আমরা এর উপকার পাব। কিন্তু এটা যেন বন্ধ না হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ-সচিব আলী ইমাম মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এটি সারা দেশের ভূমি অফিসে চালু করা দরকার। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) শহিদুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, সাধারণ মানুষের দোরগোরায় সেবা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি এটি সফলভাবে পরিচালিত হবে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন