‘অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনই বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানের একমাত্র বিকল্প- সরকারদলীয় হুইপ এন্ড্রো স্টিপেনসন এমপি।
আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধান চায় ব্রিটেন। সেই সাথে বাংলাদেশের আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকাটাও জরুরি। সংসদে অবশ্যই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকতে হবে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ। সংকট নিরসনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচনই সকল সমস্যার সমাধানের একমাত্র বিকল্প।
লন্ডন হাউস অব কমন্সে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি এলায়েন্স কর্তৃক আয়োজিত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এই আলোচনা সভায় অংশ নেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একাধিক এমপি মিনিস্টার।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সরকারদলীয় হুইপ এন্ড্রো স্টিপেনসন এমপি। সভা সঞ্চালনা করেন সংঙ্গঠনের প্রধান উপদেষ্টা কাউন্সিলার মুজাক্কির আলী।
সভায় বক্তব্য রাখেন নর্থদ্যান পাওয়ার হাউজ মিনিস্টার জেক বেড়ি, শ্যাডো মিনিস্টার কেট হলার্ন এমপি, ‘শ্যাডো মিনিস্টার’ জুলি কুপার এমপি, বৃটিশ লর্ড সভার সদস্য লর্ড কোরবান হোসেন ও গ্রাহাম জন্স এমপি।
সভার শুরুতেই বাংলাদেশের মানবাধিকারের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটিতে দেখানো হয় আওয়ামী সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে, ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য কিভাবে আদালতকে ব্যবহার করে প্রচলিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে দেশটাকে এক অন্তহীন সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনসহ এই সরকারের আমলের বিভিন্ন অনিয়ম, খুন ও মানবাধিকার লংঘনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
প্রামাণ্যচিত্রের দৃশ্য দেখে কেট হলার্ন এমপি ( শ্যাডো মিনিস্টার অব কমিউনিটি এন্ড লোকাল গভর্নমেন্ট ) আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বাংলাদেশের শিশু নির্যাতনের চিত্র এবং মায়ের গর্ভে শিশু গুলিবিদ্ধের দৃশ্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বলে উল্যেখ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন।
সরকারদলীয় হুইপ এন্ড্রো স্টিপেনসন এমপি বলেন: ‘অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনই বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানের একমাত্র বিকল্প। এন্ড্রো আরো বলেন আজকের এই আলোচনা সভার বিষয়বস্তু ফরেন মিনিস্টারে উত্তাপন করা হবে।
শ্যাডো মিনিস্টার কেট কলার্ন এমপি বলেন, উন্নয়নসহযোগী দেশ হিসেবে বৃটেন বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।
লর্ড কোরবান হোসেন বলেন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছে। এই নির্বাচনে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় বৃটেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই সংকট নিরসনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন: রোলস অব লো, ডেমোক্রাসি এন্ড জুডিশিয়ারির সভাপতি ব্যারিস্টার এম এ সালাম। সেন্টার ফর সোসিয়াল জাস্টিসের সভাপতি মাহিদুর রহমান। ডঃ আবুল হাসনাত, ব্যারিস্টার নজির আহমেদ, সিটিজেন মুভমেন্টের সভাপতি এম এ মালিক, বিবিসিএর সভাপতি ব্যারিস্টার আফজা জেড এস আলী, সাধারণ সম্পাদক ফয়জুন নূর ও আবিদুল ইসলাম আরজু।
বক্তাগণ আরো বলেন, আওয়ামী সরকার র্যাব, পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। তাদেরকে দিয়ে তারা সাধারণ জনগণের উপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন, এবং বিরুধী দলের নেতাকর্মীকে গুম খুন করছে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা চায়।
সভায় বক্তারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সভা সমাবেশে বাধা হামলা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক নেতাদের জেল, নির্যাতন, হত্যা, গুমসহ সরকারের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এসব কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে অন্তরায়।
বক্তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
দেশ জনতা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন