আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সেনা মেতায়েন ও ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এ সংক্রান্ত বক্তব্যের পরদিনই নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে এবং ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলে ঘোষণা দেন। এ নিয়ে দেশব্যাপী তুমুল আলোচনার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবারও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে তার দৃঢ়তার কথা জানান। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে এ নিয়ে কমিশনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান। একইসঙ্গে মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যকে তার ব্যাক্তিগত অভিমত বলেও অভিহিত করেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীনও মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের বিরোধিতা করে কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে বলে জানিয়েছেন। এর পরে গতকাল মঙ্গলবার সিইসি ও মাহবুব তালুকদার বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। মাহবুব তালুকদার বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন সেনাবাহিনী থাকাটা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ। দেশের অবস্থা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবেশ, সিদ্ধান্ত নেয়ার বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। সময়ই বলে দেবে কীভাবে সেনাবাহিনীকে রাখা হবে। ইসি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। ইসি বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়ে স্বচ্ছ নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে। তিনি বলেন, সিআরপিসিতেও বলা আছে সেনাবাহিনীর কমিশন অফিসার কোথাও গণ্ডগোল দেখলে আইনের আওতায় আনতে পারবেন। সে হিসেবে ইসি কোথাও সীমিত হয়ে পড়ছে না।
এরপর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের গত সোমবার সেনা মোতায়েন বিষয়ে দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বক্তব্যটি তার ব্যক্তিগত। এ ব্যাপারে কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সেনাবাহিনী নির্বাচনে থাকতে পারে কিনা এ ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। পরে ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), সংবিধান ও সিআরপিসি সংশোধন করতে হবে। সেনাবাহিনী হচ্ছে দেশ রক্ষা বাহিনী, এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন হবে না অন্য কোনো পদ্ধতিতে হবে।
নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, বিএনপির এই দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে দেশে যতগুলো সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটিতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন হয়নি।
এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইসিতে নিষিদ্ধ জামায়াতের অংশগ্রহণ নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, জামায়াতের চিহ্নিত নেতাদের নির্বাচন কমিশন (ইসি) গ্রহণ করবে না। স্বতন্ত্র হিসেবেও তারা কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাদের বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে ইসি কোনো আইন করবে কিনা, তা তিনি পরিষ্কার করেননি।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে বিএনপি বলছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এ বিষয়ে ইসি কী মনে করে- এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করার শপথ নিয়েছেন। সে শপথ নিয়ে এসে দায়িত্ব পালন করব না বলব তা হয় না। সংবিধান অনুযায়ী সংবিধান সমুন্নত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অপর প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নতুন দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সব শর্ত পূরণ করা হচ্ছে কিনা, ইসি তা কঠোরভাবে দেখবে। দোকান ভাড়া নিয়ে বলে দেবে দলীয় কার্যালয় তা হবে না। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সম্ভবত আদমশুমারির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে এবার কিছু ছিটমহল যুক্ত হয়েছে। ইসি তাদের বাদ দিয়ে চিন্তা করবে না। সেক্ষেত্রে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি চলে আসতে পারে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের একটা অনুষঙ্গ হচ্ছে যারা হেরে যায় তারা প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমাদের দায়-দায়িত্ব জনগণের কাছে। যদি নির্বাচনের কোনো প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হই, আমরা সেটা ভয় করি না। দেশের মানুষ যদি বোঝে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি, সেটা যদি মানুষের হƒদয় স্পর্শ করে তাহলে আমি মনে করব আমরা যা চেয়েছি তাই হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে তবে কোন প্রক্রিয়ায় হবে সে বিষয়ে ইসি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। একইসঙ্গে তিনি ইভিএম ব্যবহার না হওয়ার কথাও বলেন।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন