আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রপতির, এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই।
বুধবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে কোনো শূণ্যতা তৈরি হয়নি: আইনমন্ত্রী
এর আগে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করলেও কোনো শূন্যতা তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী অনিসুল হক। তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেবেন। তবে তা না দেয়া পর্যন্ত দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন।
গত শনিবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আয়োজিত নবীন আইনজীবীদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এসকে সিনহার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমি জিনিসটা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে জেনেছি। আমি এখন পর্যন্ত নিজে এ সম্পর্কে কিছু জানিনা। এজন্য এখন মন্তব্য করতে পারছিনা।
রাষ্ট্রপতি যদি ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন তখন কে হবেন প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান বিচারপতি অনুপস্থিত, অসুস্থ বা অন্য কোনো কারণে তার কার্যভার পালন করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতিকে অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।
আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, আইনজীবীরা আদালতের প্রাণ। তাদের ওপর দায়িত্ব সবসময় বেশি। এজন্য এই পেশায় থাকলে সবসময়ই পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হয়। যদি তা না হয় তাহলে এই পেশায় ভালো করা যায় না।
সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মতিন খসরু বলেন, নিয়মিত কোর্টে যাবেন। আইন শিখেই তবে মামলা পরিচালনা করবেন। মক্কেলের টাকায় আদালতে বসে বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। প্রতিদিন সকাল ৯টায় কোর্টে যাবেন এবং ৫টায় ফিরে আসবেন।
অ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্নার সঞ্চালনা ও সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ।
এর আগে নানা নাটকীয়তার পর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। সেই সাথে শেষ হয় বহুল আলোচিত প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অধ্যায়।
শনিবার দুপুরে বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ গ্রহণ করেছেন এই খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণের তথ্য নিশ্চিত করেন।
রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতির ছুটির মেয়াদের শেষ দিন ছিল ১০ নভেম্বর। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি বড় মেয়ে সূচনা সিনহার বাসায় ওঠেন।
এর আগে গত ২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি, যার মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। ছুটিতে থাকা অবস্থায় প্রধান বিচারপতির ১৩ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে বিদেশে যাওয়ার এবং ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছা পোষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। গত ১০ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে পাঠানো ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ হিসেবে শুক্রবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়।
তবে এর আগে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছিলেন প্রধান বিচারপতির যখন ইচ্ছা তখন দেশে ফিরে এজলাসে বসতে পারেন।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা চান সম্মানজনকভাবে দেশে ফিরে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য এজলাসে বসতে এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১১ অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
কিন্তু আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আগেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে বিচারকাজ পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়ায় ওই আশা পূরণের বিষয়টি অনেকটাই সুদূর পরাহত বলে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলও বিষয়টি বারবার গণমাধ্যমকে বলে আসছিলেন।
গত সোমবার এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে বিচারকার্য করবেন না বলে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক বিবৃতিতে আগেই জানানো হয়েছে। এরপরও যদি উনি (প্রধান বিচারপতি) দায়িত্ব নিতে চান তবে তা অবমাননাকর বলেই মনে করি।
ইতোমধ্যে সরকার ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সেই পুরো রায়ের রিভিউ আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইনমন্ত্রী।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর থেকে সরকারের শাসন বিভাগের সাথে বিচার বিভাগের টানা পোড়েন শুরু হয়। আইনজীবী সমিতির নেতারা এসময় অভিযোগ করে বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি সিনহা। ওই দিন মিডিয়ার সামনে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ না। আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসব। আমি একটু বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগের স্বার্থে, বিচার বিভাগটা যাতে কলুষিত না হয়, এ কারণেই আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন