সুনামগঞ্জের হাওরে ফসলহানির ঘটনায় দুদকের মামলার পলাতক আসামি ঠিকাদার আবদুল হান্নানের সঙ্গে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের সখ্য থাকার অভিযোগ রয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম রোকনউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার ছবি প্রথম আলোর হাতে এসেছে।
ঠিকাদার হান্নান গত মঙ্গলবার সিলেটের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিনের সঙ্গে ভারতে যান।
হান্নানেরই ঘনিষ্ঠজনেরা তাঁর (হান্নান) সঙ্গে পুলিশের কর্মকর্তা রোকনউদ্দিনের তিনটি ছবি গতকাল প্রথম আলোর সিলেট কার্যালয়ে পাঠান। তিনটি ছবির একটিতে দেখা যায়, রোকনউদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন হান্নান। অপর দুই ছবিতে হান্নানের ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এ পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে।
পুলিশ কর্মকর্তা রোকনউদ্দিন একই অনুষ্ঠানে ঠিকাদার হান্নানের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি যে আসামি, আমি জানিও না। এটা এখন জানলাম। তা ছাড়া ওই অনুষ্ঠানটা ছিল পারিবারিক।’
অনুষ্ঠানটি ১২ নভেম্বর হয়েছিল ঠিকাদার হান্নানের নিজের বাসায়। বিমানবন্দর থানা এলাকার হাউজিং এস্টেট এলাকায়। একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল সেটি।
একটি ছবিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানকেও দেখা গেছে। আফতাব হোসেন বলেন, ১২ নভেম্বরের ওই পারিবারিক অনুষ্ঠানে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁর উপস্থিতি ছিল স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে।
গেল বোরো মৌসুমে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ১৫৪টি হাওরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির ফসলহানি ঘটে। হাওরের বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তখন বিষয়টি অনুসন্ধানে নামে দুদক প্রধান কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। সরেজমিনে হাওর পরিদর্শন শেষে কমিটির সদস্যরা গত ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় পাউবোর কর্মকর্তা ও বাঁধের কাজ করা ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার অন্যতম আসামি ঠিকাদার আবদুল হান্নান।
ঠিকাদার হান্নান গ্রেপ্তার এড়াতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মহানগর পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য রেখে চলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেও সিলেট মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। দুদক তাঁকে পলাতক বললেও বাস্তবে তিনি প্রকাশ্যেই ছিলেন।
থানায় তথ্য গেছে?
দুদকের মামলার আসামি হলে সাধারণত সংশ্লিষ্ট থানায় প্রাথমিক তথ্য পাঠানো হয়। দুদকের চোখে পলাতক আবদুল হান্নানের বাসা বিমানবন্দর থানা এলাকার হাউজিং এস্টেট এলাকায়। ফলে তাঁর সম্পর্কিত তথ্য ওই থানাতেই পাঠানোর কথা।
তবে পুলিশ বলছে, ঠিকাদার আবদুল হান্নানের বিষয়ে দুদকের কাছ থেকে এ ধরনের তথ্য বিমানবন্দর থানা-পুলিশ পায়নি। তথ্য পেলেই কেবল পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে অনেক দিন। কিন্তু আজ (গতকাল) পর্যন্ত এ-সম্পর্কিত কোনো তথ্য থানায় পৌঁছায়নি। আমরা এ সম্পর্কে কিছু জানিও না।’
তবে মামলার বাদী ও দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো মামলা দায়েরের পরপরই দুদকের প্রথম কাজ থাকে এ-সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্যাবলি আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো। আমরা এটি করেছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন